বাম গণতান্ত্রিক জোট ঢাকা মহানগর কমিটির উদ্যোগে ডেমরার সারুলিয়া বাজারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, দেশের জনগণের ভোটাধিকার হরণ করার দায়ে বর্তমান শাসকদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
তারা বলেন, নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান ব্যতিরেকে অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে চলমান স্বৈরশাসনের অবসান ঘটাতে হবে।
সমাবেশ থেকে সংসদ ভেঙে দেয়া ও সরকারের পদত্যাগ দাবি করা হয়। একই সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতি রোধ ও দুর্নীতি-লুটপাট-অর্থপাচার-বাজার সিন্ডিকেটের হোতাদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানানো হয়।
বাম গণতান্ত্রিক জোট ঢাকা মহানগর কমিটির উদ্যোগে আজ ১৯ জুলাই ২০২৩, বুধবার, বিকেল ৫টায় নগরীর ডেমরা থানা এলাকার সারুলিয়া বাজারে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সিপিবি ডেমরা থানা শাখার সম্পাদক, পাটকল শ্রমিকনেতা মো. গোফরানের সভাপতিত্বে ও সিপিবি ঢাকা দক্ষিণ কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সাইফুল ইসলাম সমীরের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল- বাসদ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জুলফিকার আলী, বাসদ (মার্কসবাদী)র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সীমা দত্ত, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শহিদুল ইসলাম সবুজ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)র কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক জাহিদ হোসেন খান, সিপিবি ঢাকা দক্ষিণ কমিটির নেতা মঞ্জুর মঈন, সিপিবি ডেমরা শাখার নেতা হোসেন বেগ, বাসদ ডেমরা থানা কমিটির সমন্বয়ক জাকির হোসেন প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক আইনের শাসন ছাড়া কোনো উন্নয়ন জনকল্যাণ বা সামগ্রিকভাবে দেশের কল্যাণ বয়ে আনে না। এই সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে শুধু ভোটের অধিকারই কেড়ে নেয়নি, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ধ্বংস করেছে।
তারা বলেন, যে কোনো মূল্যে চলমান দুঃশাসনের অবসান ঘটাতে হবে এবং গণমাধ্যম, বিচার বিভাগসহ সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার সংগ্রাম জোরদার করতে হবে।
বক্তারা বলেন, যারা দেশের শাসন প্রক্রিয়ায় ন্যূনতম গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিনাশ করেছে, যারা জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে একটি সাংবিধানিক স্বৈরশাসন কায়েম করেছে, তাদের বিচার করা হবে। বক্তারা বলেন, শাসক গোষ্ঠীর দলগুলো রাজনীতিকে নীতিহীন, শক্তির খেলায় পরিণত করেছে। যার সুযোগে সাম্রাজ্যবাদী ও আঞ্চলিক আদিপত্যবাদী শক্তিসমূহ নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছে। জাতীয় স্বার্থ ও দেশের সার্বভৌমত্ব আজ খেলো বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, জিনিসপত্রের দাম কমানোর দাবি জনদাবি। কিন্তু সরকারেকে মানুষের কথা শুনতে হয় না। সকল রাষ্ট্রায়াত্ব পাটকল-চিনিকল বন্ধ করা হয়েছে। শ্রমিকরা এখনো সম্পূর্ণ বকেয়া পায়নি। লুটপাটের ধারায় নিঃস্বকরণ প্রক্রিয়া চলছে। অবাধ শ্রম শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ধর্মঘট নিষিদ্ধের অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। সরকারের এ সকল গণবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন জোরদার করতে হবে।
বক্তারা বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে অতীতের মতই একটি প্রহসনের নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দলকে টেনে আনার সব ধরনের প্রচেষ্টা চলমান আছে। তাতে ব্যর্থ হলে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী যত বেশি সম্ভব রাজনৈতিক দল ও শক্তিকে নির্বাচনে নিতে চায়। তারা বলেন, ইতোমধ্যে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এতটাই নাজুক অবস্থায় পৌঁছেছে যে, আমদানি বিল পরিশোধ এমনকি জরুরি ভোগ্যপণ্য আমদানির অনুমতি আটকে থাকছে। যার ফলাফল হিসেবে বাজারে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর। নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ সীমাহীন দারিদ্রতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
সমাবেশ থেকে অবিলম্বে বাজার নিয়ন্ত্রণের দাবি জানানো হয়।
বক্তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত করতে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তদারকি সরকারের দাবিতে তীব্র রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলা অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে বামপন্থি ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় নিতে হবে।
সমাবেশ শেষে সারুলিয়া বাজার থেকে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।