ঢাকার পুরানা পল্টনে পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুক্তিভবনের প্রগতি সম্মেলন কক্ষে প্রস্তুতি কমিটির সংবাদ সম্মেলন লড়াই-সংগ্রামের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির একাদশ কংগ্রেস আগামী ২৮-৩১ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। উদ্বোধনী দিন, শুক্রবার বেলা ২টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উদ্বোধনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সারাদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ লাল পতাকা নিয়ে সমাবেশে যোগ দেবেন। এরপর বর্ণাঢ্য র্যালি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেষ হবে।
কংগ্রেসে আগত বিদেশি প্রতিনিধিদের উদ্বোধনী সমাবেশের মঞ্চে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়া বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী গীতিআলেখ্য ‘দিন বদলের পালা’ পরিবেশন করবে।
এর আগে সিপিবির দশম কংগ্রেস হয়েছিল ২০১২ সালের ১১-১৩ অক্টোবর। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৪ বছর পর এবারের কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
একাদশ কংগ্রেস উপলক্ষে আজ ঢাকার পুরানা পল্টনে পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুক্তিভবনের প্রগতি সম্মেলন কক্ষে প্রস্তুতি কমিটির সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক জননেতা কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ বলেন, ‘সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তন সাধন’ এবং আওয়ামী, বিএনপি কেন্দ্রিক দ্বি-দলীয় মেরুকরণের বাইরে বাম-গণতান্ত্রিক বিকল্প গড়ে তোলার আহ্বানে এবারের কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তাই শ্লোগান ঠিক করা হয়েছে- ‘সাম্প্রদায়িকতা, সাম্রাজ্যবাদ, লুটপাটতন্ত্র, গণতন্ত্রহীনতা নিপাত যাক’। কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক পরিবর্তনের দিকে দেশকে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতির একটি পদক্ষেপ হিসেবে দলের একাদশ কংগ্রেস। কংগ্রেসের উদ্বোধনী সমাবেশে যোগদানের মধ্য দিয়ে এ পরিবর্তনে অংশ নেয়ার জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক কমরেড অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক কমরেড সাজ্জাদ জহির চন্দন।
পার্টির অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য কমরেড মো. শাহ আলম, কমরেড আলতাফ হোসাইন, কমরেড লক্ষ্মী চক্রবর্তী, কমরেড আহসান হাবিব লাবলু, কেন্দ্রীয় নেতা মাহাবুবুল আলম, রুহিন হোসেন প্রিন্স, ক্বাফি রতন, জলি তালুকদার, সাদেকুর রহমান শামীম, প্রস্তুতি কমিটির উপ-পরিষদসমূহের আহ্বায়কদের মধ্যে হাসান তারিক চৌধুরী সোহেল, আনোয়ার হোসেন রেজা, আসলাম খান, হাফিজ আদনান রিয়াদ, মানবেন্দ্র দেব, মঞ্জুর মঈন এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কংগ্রেস উপলক্ষে সারাদেশে পার্টির দেশব্যাপী সব শাখা, উপজেলা ও জেলা কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব সম্মেলনে ৬৮৩ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ২১৭ জন নারী ও ১৭ জন আদিবাসী। কংগ্রেসে যোগদানের জন্য ১০৮ জন পর্যবেক্ষককেও মনোনীত করা হয়েছে। ৯৯ জন ভেটারেন কমরেডকে কংগ্রেসে যোগদানের জন্য বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
উদ্বোধনের পরদিন ২৯ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯টায় গুলিস্তানের কাজী বশির মিলনায়তনে (মহানগর নাট্যমঞ্চ) রুদ্ধদ্বার সাংগঠনিক অধিবেশন শুরু হবে এবং চলবে ৩১ অক্টোবর বিকেল পর্যন্ত। এতে কেন্দ্রীয় কমিটি প্রণীত রাজনৈতিক প্রস্তাব ও সাংগঠনিক রিপোর্টের ওপর আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। গঠনতন্ত্র অনুসারে কংগ্রেসের ৩ মাস আগে কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে মতামত প্রদানের জন্য পার্টির অভ্যন্তরে তা বিতরণ করা হয়েছে। কংগ্রেসে গঠনতন্ত্রের সংশোধনী, অডিট কমিটির রিপোর্ট, কন্ট্রোল কমিশনের রিপোর্ট, ক্রেডেনসিয়াল কমিটির রিপোর্ট উত্থাপিত ও অনুমোদিত হবে। কংগ্রেসের শেষ অধিবেশনে আগামী ৪ বছরের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি ও কন্ট্রোল কমিশন নির্বাচন করা হবে এবং জাতীয় পরিষদ ঘোষণা করা হবে।
এছাড়া শনিবার বিকেল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের (২য় তলা) কনফারেন্স কক্ষে ‘সাম্রাজ্যবাদ, নয়া উদারনীতিবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদ’ বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সেমিনারে কংগ্রেসে যোগদানকারী বিদেশি প্রতিনিধিরা আলোচনা করবেন। এর পাশাপাশি ২৯ ও ৩০ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭.৩০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মহানগর নাট্যমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে। এসব আয়োজনে দেশের বরেণ্য শিল্পীরা অংশ নেবেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ২৯ অক্টোবর ১২টায় বিদেশি প্রতিনিধিরা কংগ্রেসে বক্তব্য রাখবেন। ৩০ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টায় ভেটারেন কমরেডদের সংবর্ধনা দেয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কংগ্রেসের প্রস্তুতির কাজে নিয়োজিত আছেন হাজার হাজার পার্টিকর্মী ও দরদী। নানাভাবে মানুষ আমাদের সহযোগিতা করছেন। গণচাঁদা এবং সভ্য ও দরদীদের আর্থিক অনুদানের ওপর নির্ভর করে এই কংগ্রেসের ব্যয় মেটানো হবে। এছাড়া কংগ্রেসের প্রতিনিধি-পর্যবেক্ষকদের
খাবারের জন্য বিভিন্ন জেলা কমিটি চাল, ডাল, তরকারিসহ অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করে পাঠিয়েছেন। কংগ্রেসকে সফল করতে কেন্দ্রীয়ভাবে গঠিত প্রস্তুতি কমিটির অধীনে ১৫টি উপ-পরিষদ রয়েছে, যেখানে ৫ শতাধিক কমরেড কর্মরত আছেন। কংগ্রেস সফল করে তুলতে মোট ৫০০ জন স্বেচ্ছাসেবক বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত আছেন এবং থাকবেন। উদ্বোধনী সমাবেশে আরো স্বেচ্ছাসেবক যুক্ত হবেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১০টি দেশ থেকে ২৬ জন প্রতিনিধি কংগ্রেসে সংহতি জানাতে উপস্থিত থাকবেন। ভারত থেকে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই), ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-সিপিআইএম, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী)-সিপিআইএমএল, অল ইন্ডিয়া ফরোয়ার্ড ব্লক, নেপাল থেকে নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (ইউএমএল), নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী), নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (মশাল), যুক্তরাজ্য থেকে ব্রিটেনের কমিউনিস্ট পার্টি, ভিয়েতনাম থেকে ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টি, জার্মানি থেকে এমএলপিডি, রাশিয়া থেকে রুশ ফেডারেশনের কমিউনিস্ট পার্টি, পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি, শ্রীলংকার কমিউনিস্ট পার্টি, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ও উত্তর কোরিয়ার ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিনিধিরা কংগ্রেসে উপস্থিত থাকবেন। কংগ্রেসের সাফল্য কামনা করে এরইমধ্যে বিভিন্ন দেশের বন্ধুপ্রতীম পার্টিগুলোর শুভেচ্ছা বার্তা আসতে শুরু করেছে।
কংগ্রেস সম্পর্কে জানতে কংগ্রেস চলাকালে প্রতিদিন বিকেল ৪টায় কংগ্রেসের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। কংগ্রেসের ‘স্পোকসম্যান’ (মুখপাত্র) থাকবেন। তাঁদের কাছ থেকে কংগ্রেস সম্পর্কে সাংবাদিকরা জানতে পারবেন।
কংগ্রেসের বক্তব্য দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে গণমাধ্যম আগের মতোই ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে বলে প্রস্তুতি কমিটির সংবাদ সম্মেলনে আশাবাদ জানানো হয়।