গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করতে - বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা, গুলি, ১ জনকে হত্যা, গায়েবী মামলা, মির্জা ফখরুলসহ অর্ধসহস্রাধিক নেতাকর্মীর গ্রেপ্তার, আওয়ামী সরকারের চরম ফ্যাবিসাদী আক্রমণ এবং মূল্য বৃদ্ধির সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ না করে পৃষ্ঠপোষকতার প্রতিবাদে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সংবাদ সম্মেলন
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
দেশের এক গভীর রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সংকটকালে বাম গণতান্ত্রিক জোটের বক্তব্য দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য জোটের পক্ষ থেকে আপনাদেরকে জানাই সংগ্রামী শুভেচ্ছা।
বন্ধুগণ,
সভা-সমাবেশ-মিছিলে বাঁধাদান করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকারকে ক্রামগত হরণ করে চলেছে। বর্তমান সরকারের দুঃশাসন ও লুটপাটের কারণে জাতীয় ও জনজীবনে সংকট সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে। দেশের অর্থনীতির ভঙুর চিত্র প্রতিদিনের সংবাদপত্রের খবরে প্রকাশ পাচ্ছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংক ডাকাতেরা ঋণ নিয়ে ফেরৎ না দিয়ে বিদেশে পাচার করে ব্যাংকগুলো ফোকলা করে ফেলেছে। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা চাল-ডাল-তেল-চিনিসহ নিত্য পণ্যের দাম দফায় দফায় অস্বাভাবিক বৃদ্ধি করে বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থতি সৃষ্টি করে জনদুর্ভোগ ক্রমাগত বাড়িয়ে তুলেছে। আর গণতন্ত্রহীনতা ও অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশে বিদেশি শক্তি ও দেশের অভ্যন্তরের অন্ধকারের শক্তিও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।
মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ আজ অসৎ রাজনীতিবিদ, সামরিক বেসামরিক আমলা, ব্যবসায়ী এবং টাকা পাচারকারী, ঋণখেলাপি, ব্যাংক ডাকাত ও বাজার সিন্ডিকেটের দখলে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে মানুষ যখন উদগ্রীব হয়ে রাস্তায় নামছে তখন পুলিশ দিয়ে মানুষ খুন করে, গায়েবী মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার, নির্যাতন নিপীড়ন করে দমন পীড়নের পথে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চাইছে, একই সাথে দলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ, মিছিল করার অধিকার দেশের সংবিধান দ্বারা সংরক্ষিত। কিন্তু শাসক সরকার জনগণের সকল সাংবিধানিক অধিকার হরণ করে দেশকে পুলিশী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। সভা-সমাবেশ করার জন্য পুলিশের অনুমতি নেয়ার অলিখিত বিধান কার্যকর করেছে। সম্প্রতি বিরোধী দল বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশগুলো পণ্ড করতে বাস, ট্রাক, লঞ্চ, থ্রি হুইলার বন্ধ করে শুধু বিএনপির সমাবেশেই প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেনি, সাধারণ জনগণের চলাচলেও বাধা তৈরি করে অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নেয়া, শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে যাওয়ায় বাধা সৃষ্টি করেছে। বাস্তবে ঐসব এলাকার জনগণকে জিম্মি করে রেখেছিল সরকার।
বিএনপির ঢাকা সমাবেশকে কেন্দ্র করে জনসভার স্থান নিয়ে সরকার বাকযুদ্ধে লিপ্ত হয়ে মূল সমস্যা থেকে জনগণের দৃষ্টি আড়াল করে দেশের সম্পদ লুণ্ঠন, ব্যাংক ডাকাতি, অর্থপাচার, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ জনজীবনের সংকট নিরসনে সরকার তার ব্যর্থতা ঢাকার অপচেষ্টা করছে।
১০ তারিখের সমাবেশকে ঘিরে গণগ্রেপ্তার ও গায়েবী মামলা দায়েরে জনমনে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এহেন পরিস্থিতিতে পুলিশের বিএনপি কার্যালয়ে হামলা, গুলি করে হত্যা, নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তার করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেমন আরও সংঘাতময় করে তুললো তেমনি এই ঘটনায় সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্র আরেকবার উন্মোচিত হলো। পাল্টাপাল্টি বাকযুদ্ধের পরে গতকাল রাতে জনসভার স্থান নিয়ে সমঝোতায় আসার খবর শুনে মানুষ যখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছিল তার পরেই গভীর রাতে মির্জা ফখরুলসহ নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় পুনরায় জনমনে উৎকণ্ঠা বেড়ে গিয়েছে।
সংবাদিক বন্ধুগণ,
দেশে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা ও জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব সরকারের। অথচ গতকাল দলীয় নেতাকর্মীদের এক সভায় দেয়া প্রধানমন্ত্রীর ‘যে হাত দিয়ে মারতে আসবে সে হাত ভেঙে দিতে হবে’, ‘যে হাত দিয়ে আগুন দিতে আসবে সে হাত আগুনে পুড়িয়ে দিতে হবে’ এ ধরনের বক্তব্য সংঘাত সংঘর্ষকে উস্কে দেয়ার সামিল। এমনকি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ ভঙেরও শামিল। আমরা সরকারের সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল অবস্থানে থেকে এহেন দায়িত্বহীন বক্তব্যেরও তীব্র নিন্দা জানচ্ছি।
গতকাল বিএনপি মহাসচিবকে অফিসে ঢুকতে না দেয়ার কারণ হিসেবে পুলিশ যে যুক্তি উপস্থাপন করছে তা খুবই হাস্যকর। বলা হচ্ছে অফিসে বোমা মজুদ করে রাখা হয়েছে। পুলিশের একথা দেশের জনগণ মোটেই বিশ্বাস করে না কারণ নিরীহ মানুষের পকেটে ফেনসিডিল, ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে মামলায় গ্রেপ্তার হয়রানী নাটক জনগণ অহরহ দেখে আসছে।
সাংবাদিক বন্ধুগণ,
নয়াপল্টনে বিএনপি’র সমাবেশ করতে না দেয়ার কারণ হিসেবে যানজট, জনদুর্ভোগের উল্লেখ করা হচ্ছে। অথচ গত ৫ এবং ২০ নভেম্বর সরকারি দল আওয়ামী লীগ উত্তরা ও বাড্ডায় জনপথ ও প্রগতি স্মরণীতে রাস্তা বন্ধ করেই বড় সমাবেশ করে ব্যাপক জনদুর্ভোগ ও যানজট সৃষ্টি করলেও পুলিশ ও সরকারের চোখে তা পড়ে নাই। এমনকি আজও দুপুরে বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ রাস্তা বন্ধ করে মঞ্চ বানিয়ে জনসভা করবে, এতে যানজট ও জনদুর্ভোগ কি হবে না? তাই জনদুর্ভোগের কথা বলে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সভা সমাবেশে বাধা দেয়া যে জনগণের প্রতি সরকার পুলিশের দরদ না বরং নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকারের স্পষ্ট লংঘন তা দেশবাসীর কাছে জলের মতো পরিষ্কার।
সাংবাদিক বন্ধুগণ,
বিরোধী দলসমূহের প্রতি সরকারের এহেন আচরণ, বিভিন্ন স্থানে বাম জোটের সমাবেশে বাধা দান, নেত্রকোনায় সিপিবি সমাবেশে সরকার দলীয় সন্ত্রাসী ও পুলিশের হামলা, বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে বাস ট্রাক, লঞ্চ, ত্রি হুইলার বন্ধ করে বাধা সৃষ্টি এবং ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করেও সরকার-পুলিশের ন্যাক্কারজনক ভূমিকা এবং যুদ্ধাংদেহী মনোভাব গোটা দেশের জনগণের মধ্যে চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে।
আমরা অবিলম্বে সরকার ও পুলিশ কর্তৃক বিরোধী মত দমনের হীনপথ পরিবহার করে শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ করতে দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। একই সাথে বিএনপি অফিসে হামলা, টিয়ার সেল নিক্ষেপ ও হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত দায়ী পুলিশের বিচার এবং মির্জা ফখরুলসহ গ্রেপ্তারকৃত নেতৃবৃন্দের মুক্তি, নিহতের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, আহতদের সুচিকিৎসা প্রদান এবং গণগ্রেপ্তার ও গায়েবী মামলা বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি।
আমরা ২০১৪, ২০১৮ সালের নির্বাচনে নজীরবিহীন জালিয়াতি ও ভোট ডাকাতির দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী শেখ হাসিনার সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করে, সংসদ ভেঙে দিয়ে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতিসহ নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করে নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি। একই সাথে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারকে উৎখাত করে জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সকল বাম-গণতান্ত্রিক শক্তি ও ব্যক্তিকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি।
কর্মসূচি
উপরোক্ত দাবিতে দেশব্যাপী ১৩ ডিসেম্বর প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ দিবস পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করছি। ঐদিন ঢাকায় বিকেল ৪টায় পল্টন মোড়ে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
শুভেচ্ছান্তে
রুহিন হোসেন প্রিন্স
সমন্বয়ক
বাম গণতান্ত্রিক জোট
কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদ