জ্বালানি তেল, ইউরিয়া সার, খাদ্যসহ নিত্যপণ্যে, পরিবহনের ভাড়া কমানো ও বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা বন্ধের দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোট আহূত হরতাল শেষে ঢাকার পুরানা পল্টন মোড়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে দাম কমানোর দাবি আদায় এবং দুর্নীতি, লুটপাট বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
বেলা ১১টায় বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)’র সাধারণ সম্পাদক বজলুর
রশীদ ফিরোজ, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)’র সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের কার্যকরী সভাপতি আব্দুল আলী, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী)‘র নেতা বিধান রায় প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। সমাবেশ পরিচালনা করেন শহীদুল ইসলাম সবুজ।
সমাবেশে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, বামপন্থিদের হরতালের কর্মকাণ্ড গত ৬ আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে। দাম বাড়ানো সরকারের গণবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে ও দাম কমানোর দাবিতে আমাদের আন্দোলনে ও আজকের হরতালে আমরা নৈতিক সমর্থন পেয়েছি। এই সমর্থনকে গণসংগ্রামে
পরিণত করতে সাধারণ মানুষকে রাজপথে নেমে এসে দুঃশাসনের অবসান ঘটাতে হবে। বাম বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় হরতালের আগের রাতে ছাত্রনেতা দীপক শীলসহ নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ দিনাজপুরে ছাত্রনেতা লিটন রায়কে গ্রেফতার ও ঢাকার শাহবাগে হামলা চালিয়ে ছাত্রদের আহত করা হয়েছে।
এতসবের মধ্যেও আমাদের নেতাকর্মীরা ধৈর্য্য ধরে হরতাল সফল করেছে।
তিনি বলেন, জ্বালানি তেল, ইউরিয়া সার, খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের দাম, পরিবহনের ভাড়া কমানোর দাবিতে ও বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া বন্ধের আন্দোলন অব্যাহত
থাকবে। আগামীতে অন্যান্য বামপন্থি দল, সংগঠনের সাথে কথা বলে অবরোধ, ঘেরাওসহ আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
ভোর ৬টা থেকে রাজপথে নেতৃবৃন্দ
ঘড়ির কাটায় ঠিক ৬টায় বাম জোটের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ঢাকার পল্টন, গুলিস্তান, তোপখানা রোড, বিজয়নগর এলাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করে। এ সময় বাম জোটের সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, সিপিবি’র সহ সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, কেন্দ্রীয় নেতা লক্ষ্মী চক্রবর্তী, ডা. দিবালোক সিংহ, ডা. ফজলুর রহমান, আনোয়ার হোসেন রেজা, রাগিব আহসান মুন্না, অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, হাসান তারিক চৌধুরী, আসলাম খান, লুনা নূর, মানবেন্দ্র দেব, বাসদের রাজেকুজ্জামান
রতন, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের ডা. হারুন উর রশীদ, বাসদ (মার্কসবাদী)’র ফখরুদ্দিন আতিক, মানস নন্দী, সীমা দত্তসহ বাম জোটের শরীক বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
হরতাল চলাকালীন সময়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বাম জোটের সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে হরতালের কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। আমরা জোর করে কোনো যানবাহন আটকাচ্ছি না। ‘যদি মানুষ বলে এই হরতালে মানুষের সমর্থন নেই তাহলে মেনে নেব, কিন্তু মানুষ এমন কথা বলছে না। সাধারণ মানুষ হরতালে অংশগ্রহণ করে রাস্তায় না নামলেও স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানিয়েছে। কিন্তু এই সমর্থন সরকারের কানে যায় না।
তিনি বলেন, আমরা খবর পেয়েছি মালিকরা
জোর করে শ্রমিকদের গাড়ি চালাতে বাধ্য করছে। কিন্তু এই হরতালে যারা বাস চালাচ্ছেন বা জীবিকার প্রয়োজনে কাজে বের হচ্ছেন, সেই শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষেরাও আমাদের দাবির প্রতি নৈতিক সমর্থন জানাচ্ছেন।
সারাদেশে রাজপথে বামপন্থি নেতাকর্মীরা
হরতালের সমর্থনে সারাদেশে সব জেলায় কম-বেশি বামপন্থি নেতাকর্মীরা রাজপথে ছিলেন। এসময় নেতাকর্মীরা সাধারণ মানুষকে তাদের নিজের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শুধুমাত্র ক্ষমতাশ্রয়ী দলগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। ওরা সাধারণ মানুষকে তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার সিড়ি হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। তাই ঐ সব দলকে ‘না’ বলে বামপন্থি শক্তির পতাকাতলে সমবেত হতে হবে।