Revolutionary democratic transformation towards socialism

“দুঃশাসনের অবসান ও চার মূলনীতিসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূলভিত্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে”


বঙ্গবন্ধু স্মরণে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) আয়োজিত আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র উন্মোচন করার আহ্বান জানিয়েছেন। নেতৃবৃন্দ এজন্য ট্রুথ কমিশন গঠনেরও আহ্বান জানান।
 
নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৫ আগস্ট ছিল দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে প্রতিক্রিয়াশীল ক্যু। এর মধ্যে দিয়ে দেশকে পুনরায় পাকিস্তানি ধারায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। ক্ষমতার নানা পরিবর্তন হলেও, ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের পরবর্তী ধারায় দেশ চলছে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, এ অবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত করতে দুঃশাসনের অবসান ও চার মূলনীতিসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূলভিত্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের ৪৭তম বার্ষিকীতে আজ ১৫ আগস্ট ২০২২ বিকেল ৫টায় মুক্তি ভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সভাপতি কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে ও পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স এর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন পার্টির উপদেষ্টা, সাবেক সভাপতি কমরেড মনজুরুল আহসান খান, সিপিবির সাবেক সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সিপিবির সহ সাধারণ সম্পাদক কমরেড মিহির ঘোষ, সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য কমরেড এ এন রাশেদা।

সভাপতির বক্তব্যে কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ‘৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে সূচিত প্রগতিশীল ধারাকে উল্টিয়ে দিয়ে দেশকে পাকিস্তানি ধারায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সামরিক শাসনের অধীনে সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তন করে দেশকে পশ্চাৎমুখী করা হয়েছিল। এখন শেখ হাসিনার

আওয়ামী লীগ দেশের ৯৫% মানুষের স্বার্থের বিপরীতে এবং পুঁজিবাদী মুক্তবাজার অর্থনীতির ধারাতেই দেশ পরিচালনা করছে। তারা সমাজতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িকতাকে বর্জন করে সাম্রাজ্যবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে তোষণ করে ক্ষমতায় টিকে আছে।

সিপিবি’র উপদেষ্টা কমরেড মনজুরুল আহসান খান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হচ্ছেন ইতিহাসের মহানায়ক। তাঁর স্বপরিবারে হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে দেশে পাকিস্তানি ধারা পুনঃপ্রবর্তন হয়েছিল। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা খুনিদের কাছে আত্মসমর্পণ না করলে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের প্রতিরোধ করা যেত। তিনি আরো বলেন, কেবল বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘১৯৭৫ এর আগে থেকেই আমাদের দেশের পুঁজিবাদী ধারা শুরু হয়েছিল। জমির সিলিং কার্যকর করতে পারেনি। ঘুষ, দুর্নীতি বেড়েই চলছিল। ব্যক্তিস্বার্থে বিনিয়োগের সিলিং বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই সুযোগে দেশি-বিদেশি প্রতিক্রিয়াশীল চক্র ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট তাদের ষড়যন্ত্র কার্যকর করে।

তিনি এই ষড়যন্ত্র উন্মোচনে ট্রুথ কমিশন গঠনের আহ্বান জানান। তিনি চলমান দুঃশাসনের অবসান ও চার মূলনীতিসহ মুক্তিযুদ্ধের মূলভিত্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। 

সিপিবি’র সাবেক সভাপতি, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘দেশ একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে পৌঁছে গেছে। অর্থনীতি চরম বিপর্যয়ের দিকে। এ সময় সরকারের উদ্যোগ মানুষের বিপরীতে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে

বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এসময় নানা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রও সামনে আসে। সাধারণ মানুষের গণসংগ্রাম, গণআন্দোলন এসব ষড়যন্ত্রের বিপরীতে মানুষের স্বার্থ রক্ষা করতে পারে। দুর্নীতি-লুটপাট-টাকা পাচার অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি প্রগতিশীল অগ্রগতি। এই অগ্রগতি ধরে রাখা যায়নি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশকে পিছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা ছিল। এই হত্যাকাণ্ড ছিল রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াশীল ঘটনা।

তিনি বলেন, আমরা অনেকদিন ধরে ট্রুথ কমিশন বা উচ্চতর কমিশন গঠন করে এই হত্যাকাণ্ডের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র উন্মোচনের দাবি করে আসছি।
 
সিপিবি’র সহ-সাধারণ সম্পাদক কমরেড মিহির ঘোষ বলেন, ‘বর্তমান প্রজন্মের কাছে ইতিহাসকে স্পষ্ট করতে হবে। সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্রের কারণে শেখ মুজিব সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এই হত্যার মধ্য দিয়ে দেশ প্রগতিমুখীনতার বিপরীতে চলে যায়। এর নেপথ্যে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র উন্মোচন করতে পারলেই বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হবে। বঙ্গবন্ধু দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছিলেন-বর্তমানে তার কন্যা দুর্নীতিকে পুনর্বাসিত করেছে। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে সাম্রাজ্যবাদের চক্রান্তে পাকিস্তানের ভাবাদর্শ ফিরে এসেছিল।’

কমরেড এ এন রাশেদা বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘শেখ মুজিবের নিজের বক্তৃতাই আজকের আওয়ামী লীগের সাথে সাংঘর্ষিক। বর্তমান আওয়ামী লীগ দুঃশাসনকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।’

সভার শুরুতে বঙ্গবন্ধু ও ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডে নিহতদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন

Login to comment..