ঐতিহাসিক খাপড়া ওয়ার্ড শহিদ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) আয়োজিত আলোচনাসভায় নেতৃবৃন্দ বলেছেন, খাপড়া ওয়ার্ডের বিপ্লবী লড়াই এ দেশের গণতান্ত্রিক ও বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসের এক উজ্জ্বলতম পর্ব। কারাগারের অভ্যন্তরেও কমিউনিস্ট পার্টির নেতা-কর্মীরা শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন, অকাতরে জীবন উৎসর্গ করেছেন। সেদিনের সেই লড়াই আজও আমাদের পথ দেখায়, উজ্জীবিত করে। খাপড়া ওয়ার্ডের লড়াই বিপ্লবী আন্দোলনের প্রেরণা।
আজ ২৪ এপ্রিল বিকেলে পুরানা পল্টনের কমরেড মণি সিংহ সড়কস্থ মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য কমরেড শাহীন রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন পার্টির সাবেক সভাপতি কমরেড মনজুরুল আহসান খান, সিপিবির কমরেড সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, খাপড়া ওয়ার্ডে আহত বন্দী রশিদ উদ্দিন আবুর কন্যা লীলা রশিদ, প্রসাদ রায়ের কন্যা বৃত্বা রায় দীপা, উপস্থিত ছিলেন কমরেড আব্দুস শহীদের কন্যা জয়া শহীদ। লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য লুনা নূর।
আলোচনাসভার শুরুতে খাপড়া ওয়ার্ডের শহিদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয় এবং অস্থায়ী বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়।
খাপড়া ওয়ার্ডের শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে নেতৃবৃন্দ বলেন, খাপড়া ওয়ার্ডের লড়াই আমাদের গণতান্ত্রিক ও বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ পর্ব। শুধু ইতিহাসকে জানার জন্যই নয়, ভবিষ্যতের দিশা পাবার জন্যও খাপড়া ওয়ার্ডের লড়াইকে অনুধাবন করা জরুরি। খাপড়া ওয়ার্ডের গৌরবোজ্জ্বল কাহিনি ও শিক্ষা সবখানে ছড়িয়ে দিতে হবে। মানবমুক্তির লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। খাপড়া ওয়ার্ডের লড়াইয়ের ধারায় নতুন প্রজন্ম গড়ে তুলতে হবে। শহিদ-যোদ্ধাদের আদর্শ, লড়াই ও আত্মত্যাগের ধারা নতুন প্রজন্মকে পথ দেখাবে। শহিদদের স্বপ্নের সমাজতান্ত্রিক-সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই শহিদদের প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ খাপড়া ওয়ার্ডের শহিদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান এবং পাঠ্যপুস্তকে খাপড়া ওয়ার্ডের বিপ্লবী কাহিনি অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান।
এছাড়া রাজশাহী জেলের অভ্যন্তরে খাপড়া ওয়ার্ড শহিদ স্মৃতিসৌধে সিপিবির নেতৃবৃন্দ আজ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
উল্লেখ্য, ১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল রাজশাহী জেলের খাপড়া ওয়ার্ডে কমিউনিস্ট-রাজবন্দীদের ওপর পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। পুলিশের গুলিতে বন্দী অবস্থায় শহিদ হন কমিউনিস্ট পার্টির সুধীন ধর, বিজন সেন, হানিফ শেখ, সুখেন্দু ভট্টাচার্য, দেলোয়ার হোসেন, কম্পরাম সিং ও আনোয়ার হোসেন। আরও ৩২ জন কমিউনিস্ট-রাজবন্দী গুরুতর আহত হন।