Revolutionary democratic transformation towards socialism

গোপালগঞ্জের ‘লেবু-কমলেশ-বিষ্ণু-মানিক’ হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ, বিচার দাবি সিপিবি’র

১৯৭৩ সালে গোপালগঞ্জে বহুল আলোচিত চার মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধের ৮ ও ৯নং সেক্টরের কমান্ডার ও কমিউনিস্ট পার্টি-ন্যাপ ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলা বাহিনীর প্রধান সমন্বয়কারী ওয়ালিউর রহমান লেবু, ন্যাপ নেতা কমলেশ বেদজ্ঞ, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা বিষ্ণুপদ ও মানিককে হত্যার বিচার না হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট (সিপিবি)।

এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স অবিলম্বে কমরেড লেবু-কমলেশ-বিষ্ণু-মানিক হত্যার বিচার এবং হত্যাকারীদের শাস্তি দাবি করেন। 

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর পর গোপালগঞ্জের জনপ্রিয় কমিউনিস্ট ও বামপন্থীদের হত্যার ও এর বিচার না হওয়ায় পরবর্তীতে এসব হত্যাকাণ্ড থামেনি। তৎকালীন সরকারের ছত্রছায়ায় হত্যাকারীরা লালিত-পালিত হয়েছে। এমনকি তাদের পুরস্কৃতও করা হয়েছে। নেতৃবৃন্দ এসব হত্যাকারী ও এর মদদদাতাদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। 

উল্লেখ্য যে, দীর্ঘ ৪৯ বছর পার হলেও গোপালগঞ্জের চার বীর মুক্তিযোদ্ধা হত্যা মামলার বিচার কাজ শেষ হয়নি। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় উচ্চ আদালতের মাধ্যমে অন্ততঃ ছয়বার মামলা স্থগিত করেছে। ফলে মামলাটি এখন উচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধে ৮ ও ৯ নং সেক্টরে গেরিলা বাহিনীর প্রধান সমন্বয়কারী ওয়ালিউর রহমান লেবু, ন্যাপ নেতা কমলেশ বেদজ্ঞ, ছাত্রনেতা বিষ্ণুপদ ও মানিককে ১৯৭৩ সালের ১০ মার্চ কোটালীপাড়ার টুপুরিয়া ব্রিজের কাছে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। মামলা সূত্রে জানা যায়, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ন্যাপ নেতা কমলেশ বেদজ্ঞ কোটালীপাড়া আসনে প্রতিদ্বন্দিতা করেন। নির্বাচনী কাজ শেষে ১০ মার্চ সকালে উপজেলার সিকির বাজার থেকে নৌকায় করে গোপালগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হন। নৌকাটি টুপুরিয়া ব্রিজের কাছে পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা ওয়ালিউর রহমান লেবু, ন্যাপ নেতা কমলেশ বেদজ্ঞ, ছাত্রনেতা বিষ্ণুপদ ও মানিককে রামদা, কোদাল, লোহার রড, ছ্যান দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা বর্তমান জেলা কৃষকলীগ নেতা লুৎফর রহমান গঞ্জরকে মৃত ভেবে ফেলে যায়।

ওই ঘটনার পরদিন ১১ মার্চ তৎকালীন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুল কাদেরের কাছে দেয়া লুৎফর রহমানের জবানবন্দি অনুযায়ী গোপালগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয় (মামলা নং-০৫, তাং-১১-০৩-৭৩, জিআর নং-৯৬/৭৩)। মামলায় মুক্তিযুদ্ধের হেমায়েত বাহিনী প্রধান প্রায়ত হেমায়েত উদ্দিন বীর বীক্রমসহ ২১ জনকে আসামি করা হয়। 

এদিকে, জীবনের নিরাপত্তায় মামলার বাদী লুৎফর রহমান গঞ্জরের কোনো তৎপরতা না থাকায় নিহত কমলেশ বেদজ্ঞর মেয়ে নারী নেত্রী সুতাপা বেদজ্ঞ বাদী হতে আবেদন করেন। পরে সুপ্রিম কোর্ট আবেদন মঞ্জুর এবং হাইকোর্টের দেয়া স্থাগিতাদেশ খারিজ করায় মামলাটি আবারো গোপালগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারিক কাজ শুর হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু এখনও কোনো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে দ্রুত এই বিচার কার্যকর করার দাবি জানান। 

কর্মসূচি
আগামীকাল মুক্তিভবনস্থ পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সকাল ১১টায় শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। 
গোপালগঞ্জে সকাল ৮টায় শহীদদের সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানোর মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হবে। 

বিকেল ৪টায় গোপালগঞ্জে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত স্মরণসভায় উপস্থিত থাকবেন সিপিবি কন্ট্রোল কমিশনের সদস্য কমরেড অধ্যক্ষ মো. আবু হোসেন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. মনোজ দাশ।


Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন

Login to comment..