আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২২ উপলক্ষে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এক বিবৃতিতে সারা পৃথিবীর মেহনতি, লড়াকু নারী সমাজ এবং নারীমুক্তির লড়াইয়ের সকল শক্তিকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স এক বিবৃতিতে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর হাজার বছরের লড়াই সংগ্রামের এক অর্জন, এ দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। নিউইয়র্কের সূতাকলের নারী শ্রমিকদের মজুরি বৈষম্য, কর্মঘণ্টা ও অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে আন্দোলন সরকারের গু-া বাহিনীর আক্রমণের মধ্য দিয়ে দমন করতে চায়। ইতিহাসের সেই লড়াইয়ের ক্ষণকে স্মরণ করে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিন নারী আন্দোলনকে বেগবান এবং জোরদার করার লক্ষ্যে এ দিবস ঘোষণার উদ্যোগ গ্রহণ করে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, শুরুতে শুধুমাত্র সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো পালন করলেও এখন পৃথিবী জুড়ে নানা আঙ্গিকে নারী দিবস পালন করা হয়। বিদ্যমান পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা ক্রমশঃ বিকাশের ফলে ১১২তম নারী দিবসে এসেও নারীর সামগ্রিক অবস্থান তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। পুঁজিবাদ নারীকে পণ্যে পরিণত করে তার মুনাফা অর্জনের জন্য নারী অধস্তনতা, নারী নির্যাতন এবং বৈষম্যের সকল উপাদানকে টিকিয়ে রাখে, কাজেই নারীমুক্তির মূল শত্রু পুঁজিবাদকে রুখে দেয়ার মধ্য দিয়ে নারীমুক্তির লড়াইকে বেগবান করতে হবে।
নারীকে দুইটি বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়- এক হলো বিদ্যমান শোষণ নীপিড়নের বিরুদ্ধে, আরেকটি হলো পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার কিরুদ্ধে। নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, দেশে যখন গণতন্ত্র থাকে না সমাজে তখন শোষণ নিপীড়ন বাড়তেই থাকে এবং এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নারী সমাজ। যার কারণে আজকে বাংলাদেশে যে কোনো সময়ের চেয়ে নারী নির্যাতন খুন-ধর্ষণ ও শিশু হত্যা ভয়াবহ আকরে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিনই দেশের, কোনো না কোনো প্রান্তে নারী ও শিশুরা খুন-ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
বিদ্যমান আইনী কাঠামোতে নারীর সমঅধিকার চরমভাবে অবহেলিত। রাষ্ট্রে বিচারহীনতা ও জবাবদিহীতার অভাব, সর্বোপরি গণতন্ত্রহীনতার কারণে নারী-নির্যাতন-শোষণ ক্রমাগত: বেড়েই চলে। পুঁজিবাদ নারীদিবসের তাৎপর্যকে ভিন্ন ধারায় একটি সাধারণ আনন্দ উদযাপনে পরিণত করেছে। এ ব্যাপারে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। কাজেই নারীমুক্তির লড়াই একটি রাজনৈতিক লড়াই। নারীমুক্তির লড়াই এবং সমাজ পরিবর্তনের লড়াই সমানভাবেই অগ্রসর করতে হবে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ সারাদেশে যথাযথ মর্যাদায় নারী দিবস পালনের আহ্বান জানান।
৯ মার্চ সিপিবি’র আলোচনা সভা
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র উদ্যোগে আগামী ৯ মার্চ ২০২২, বুধবার, বিকেল ৪টায়, মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।