Revolutionary democratic transformation towards socialism

শহীদ তাজুলের দেখানো পথে গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতার জন্য আজও লড়াই চলছে


স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনের মহান শহীদ কমরেড তাজুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র  নেতা কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, কমরেড তাজুল ইসলাম বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। শহীদ তাজুলের দেখানো পথে আজও তাঁর কমরেডরা গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। 

৩৮তম শহীদ তাজুল দিবসে আজ ১ মার্চ ২০২২, সোমবার পুরানা পল্টনে মুক্তিভবনের সামনে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের পর অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে কমরেড সেলিম এসব কথা বলেন। এ সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, গণসংগঠন, পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ শহীদ তাজুলের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

কমরেড সেলিম বলেন, শহীদ তাজুল শ্রমিকশ্রেণির মুক্তিকে চূড়ান্ত লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে তৎকালীন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রামে নিয়োজিত হয়েছিলেন। এ সংগ্রামে তিনি তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। আজ কমরেড তাজুলের আত্মত্যাগের ৩৮ বছর পরেও দেশের মানুষের ভোটের অধিকার এবং মতপ্রকাশের অধিকার হরণ করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে দেশের মানুষের সংগ্রামে শহীদ তাজুল সর্বদাই অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন।

তাজুল স্মরণে সিপিবি নেতা কমরেড সেলিম বলেন- শহীদ তাজুল স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে তাদের দোসরদের হাতে জীবন দিয়েছে অথচ গণতান্ত্রিক দেশ প্রতিষ্ঠা করতে স্বৈরাচারের পতন হলেও প্রকৃত গণতন্ত্র আজও ফিরে আসেনি দেশে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে একটি সরকার গঠন হলেও রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করে অগণতান্ত্রিক

পদ্ধতিতে রাষ্ট্র পরিচালনা ও গণতন্ত্রহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করেছেন। দেশের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামোর সকল প্রতিষ্ঠান দলীয়করণ করে দলীয় ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠান করেছে, নির্বাচন ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ করে নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। এর বিরুদ্ধে বাম প্রগতিশীলদের ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে বিকল্প নেই, সেই বিকল্পের লড়াইয়ে সিপিবি শহীদ তাজুলের চেতনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। 

সিপিবি’র নেতা মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন- শহীদ কমরেড তাজুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েও ব্যক্তিগত আরাম-আয়েশ পরিত্যাগ করে এদেশের শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির জন্য নিজেকে নিবেদিত রেখেছিলেন। বদলি শ্রমিকের কাজ নিয়ে আদমজী পাটকলে শ্রমিকদের সংগঠিত করেছিলেন। এরশাদ স্বৈরাচারের গুণ্ডারা তা‍ঁকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে। কমরেড তাজুল নিজের মতাদর্শগত চেতনায় এবং পার্টির নির্দেশে স্বৈরাচারবিরোধী হরতাল সফল করতে গিয়ে জীবন দিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যু এক মহান মৃত্যু। কিন্তু তাঁর জীবন সংগ্রাম আরো মহান। আজ মালিকদের দ্বারা শ্রমিক শোষণের নির্মমতা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। তিনি কমরেড তাজুলের ন্যায় মালিকশ্রেণির শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পার্টি সদস্য-সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য যে, কমরেড তাজুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতক শেষ করে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সিদ্ধান্ত অনুসারে শ্রমিকশ্রেণির মুক্তির সংগ্রামকে অগ্রসর করার মহান ব্রত নিয়ে আদমজী মিলে বদলি শ্রমিকের চাকরি নেন। আদমজীতে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন ও সংগঠন গড়ে তোলার কাজে তিনি আত্মনিয়োগ করেন। তিনি ছিলেন সিপিবি’র

আদমজী শাখার সম্পাদক ও আদমজী মজদুর ট্রেড ইউনিয়নের নেতা। 

১৯৮৪ সালের ১ মার্চ দেশব্যাপী আহূত শিল্প ধর্মঘট ও হরতালের সমর্থনে আগের দিন মধ্যরাতে আদমজী জুটমিল এলাকায় কমরেড তাজুলের নেতৃত্বে শ্রমিকরা প্রচার মিছিল বের করলে, তৎকালীন স্বৈরশাসক এরশাদ সরকারের গুণ্ডাবাহিনীর হামলায় কমরেড তাজুল ইসলামসহ কয়েকজন শ্রমিক মারাত্মক আহত হন। ১ মার্চ ভোরবেলা গুরুতর আহত অবস্থায় কমরেড তাজুলকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির কিছুক্ষণ পরে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। 

শহীদ তাজুল স্মরণে নির্মিত ‘অস্থায়ী শহীদবেদী’তে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের শ্রদ্ধা নিবেদন

আজ ১ মার্চ ২০২১, সোমবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কমরেড শহীদ তাজুল ইসলাম স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। বিভিন্ন দল, সংগঠনের পুষ্পার্ঘ্য নিবেদনের মধ্য দিয়ে শহীদ তাজুলের স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী বেদী ফুলে ফুলে ভরে যায়। প্রথমেই সিপিবি’র নব নিবাচিত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। এরপর একে একে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাম গণতান্ত্রিক জোট, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাসদ (মার্কসবাদী), বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি, বাংলাদেশ কৃষক সমিতি, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি), সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, সাপ্তাহিক একতা, বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়ন, সিপিবি’র বিভিন্ন জেলা ও থানা শাখা সমূহের নেতৃবৃন্দ।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন

Login to comment..