Revolutionary democratic transformation towards socialism

কমরেড মোর্শেদ আলী মেহনতি মানুষের মুক্তিসংগ্রামে ইতিহাসে চিরঞ্জীব


বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র কন্ট্রোল কমিশনের অন্যতম সদস্য, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি)-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সাবেক সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বর্ষীয়ান কমিউনিস্ট নেতা, আজীবন বিপ্লবী কমরেড মোর্শেদ আলীর স্মরণে আয়োজিত স্মরণসভায় নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

করোনাকালে গত ৭ এপ্রিল কমরেড মোর্শেদ আলী বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। করোনা অতিমারি কিছুটা কমে আসায় আজ ৬ নভেম্বর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির উদ্যোগে পল্টনস্থ মৈত্রী মিলনায়তনে স্বশরীরে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। স্মরণসভায় পার্টি সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোহাম্মদ শাহআলম, ঐক্য ন্যাপে সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য, সিপিবির উপদেষ্টা সাবেক সভাপতি কমরেড মনজুরুল আহসান খান, বাসদের সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান, শ্রমিক নেতা কমরেড মাহবুব আলম, কমরেড আব্দুল মালেক, কমরেড মোর্শেদ আলীর কনিষ্ঠ ভ্রাতা শওকত আলী অনু, জেষ্ঠ্য কন্যা অ্যাডভোকেট মৌলী মোর্শেদ মৌ। সভা পরিচালনা করেন সিপিবির সহকারী সাধারণ

সম্পাদক কমরেড সাজ্জাদ জহির চন্দন।

স্মরণসভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, কমরেড মোর্শেদ আলী কৈশোরে ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে কমিউনিস্ট আন্দোলনে যুক্ত হন। তিনি ছিলেন মেধাবী ও জনপ্রিয় ছাত্রনেতা। ছাত্র ইউনিয়ন ও ডাকসুর নেতা হিসেবে ছাত্রসমাজের অধিকার আদায় ও শিক্ষার আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। ছাত্রজীবনেই তিনি কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন এবং কারাবরণ করেন। ছাত্রআন্দোলন শেষে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির নির্দেশে সার্বক্ষণিক কর্মী হিসেবে ডেমরায় বস্তিতে থেকে শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তুলতে আত্মনিয়োগ করেন। টিইউসি গড়ে তুলতে তিনি অসামান্য ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি কৃষক আন্দোলনে সার্বক্ষণিকভাবে যুক্ত হন এবং নেতৃত্ব দেন। ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে তিনি ছিলেন বিশিষ্ট সংগঠক। ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন গেরিলা বাহিনীর যোদ্ধা হিসেবে  ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, কমরেড মোর্শেদ আলী শ্রমিক ও কৃষক আন্দোলনের পাশাপাশি নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে প্রায় ২৮ বছর তিনি ঢাকা মহানগরে পার্টি গড়ে তোলার কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ৯০-এর দশকে কমিউনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরে বিলোপবাদী ষড়যন্ত্র শুরু হলে, সেই ষড়যন্ত্রের

বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় কমিটির যে কজন নেতা রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, তিনি ছিলেন তাঁদের অন্যতম। সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইয়ে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি লেখালেখিতেও সক্রিয় ছিলেন। সহজ-সরল ভাষায় পার্টির বক্তব্য তুলে ধরেছেন।

নেতৃবৃন্দ বলেন, মোর্শেদ আলী এ দেশের শ্রমিক শ্রেণির মুক্তির জন্য আমৃত্যু লড়াই করেছেন। তিনি মানুষকে খুব সহজেই কাছে টেনে নিতে পারতেন। এ দেশের শ্রমিক, কৃষক আন্দোলন তথা কমিউনিস্ট আন্দোলনে কমরেড মোর্শেদ আলীর অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর মৃত্যুতে দেশ একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক, বিপ্লবী নেতাকে হারালো। তাঁর মৃত্যুতে এ দেশের কমিউনিস্ট, প্রগতিশীল আন্দোলনের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন নিয়ে তিনি সংগ্রাম করেছেন, তাঁর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে। তাঁর বিপ্লবী জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে বিপ্লবী লড়াইকে অগ্রসর করতে হবে। নেতৃবৃন্দ বলেন, কমরেড মোর্শেদ আলী বাংলাদেশের মেহনতি মানুষের মুক্তির সংগ্রামের ইতিহাসে চিরঞ্জীব হয়ে থাকবেন। তিনি ধ্রুবতারা মতো আগামী লড়াইয়ে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।

স্মরণসভার শুরুতে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীবৃন্দ শোক সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে কমরেড মোর্শেদ আলীর প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন

Login to comment..