Revolutionary democratic transformation towards socialism

পাকিস্তানীদের পরাজিত করে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা এনেছি এবার লুটেরাদের পরাজিত করে শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবো


দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, ঘুষ-দুর্নীতি-লুটপাট বন্ধ ও ভোটাধিকার ও  গণতন্ত্র নিশ্চিত করার দাবিতে আজ ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) আহুত দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সভাপতিত্বে বিকাল সাড়ে ৪টায় পুরানা পল্টন মোড়ে কেন্দ্রীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম, সহকারী সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাজ্জাদ জহির চন্দন।

সমাবেশে সভাপতির ভাষণে কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, করোনাকালে লাখ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছে। সত্তর শতাংশ মানুষের আয় কমে গেছে। নতুন করে আড়াই কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ায় এখন দেশে পাঁচ কোটির বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। অপরদিকে চাল-ডাল-তেল-লবণ-চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী। ফলে মানুষের জীবন আজ দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। করোনাকালে মানুষের দৈনন্দিন জীবন ধারণ কঠোর থেকে কঠোরতর হয়ে উঠেছে।

সিপিবি সভাপতি বলেন, বর্তমান সময়ে দেশে ঘুষ-দুর্নীতি-লুটপাট সকল সময়ের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। করোনাকালে হাসপাতালগুলোতে দুর্নীতি সকল সীমা অতিক্রম করেছে। করোনাকালে মানুষের আয় যখন কমছে তখন লুটপাটের মাধ্যমে ১১হাজার ৬৪৭ জন নতুন কোটিপতির জন্ম হয়েছে। প্রতি বছর দেশ থেকে সত্তর হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এ টাকা বিনিয়োগ করে দেশে প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যেত ফলশ্রুতিতে দেশে বেকারত্ব হ্রাস পেত।

তিনি বলেন, শেয়ারবাজার লুট, ই-কমার্স নামে হায়হায় কোম্পানি মানুষের সঞ্চয় লুটে নিচ্ছে। ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে লুটপাট করে দেশের প্রবৃদ্ধির প্রায় পুরোটাই লুটেরা শাসকরা আত্মসাৎ করে নিচ্ছে।

কমরেড সেলিম আরো বলেন, লুটপাট টিকিয়ে রাখতে লুটেরা ধনিকশ্রেণি মানুষের বাক-স্বাধীনতা, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র

খর্ব করছে। দীর্ঘদিন ধরে মানুষ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পুলিশের খবরদারি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে মানুষের মতপ্রকাশ ও গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় সংস্থাসমূহের প্রতিহিংসায় সাধারণ মানুষ নাজেহাল হচ্ছে।

কমরেড সেলিম দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ঘুষ-দুর্নীতি-লুটপাট প্রতিরোধ, জীবন-জীবিকা, বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা, ভোটাাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার সমুন্নত রাখতে হলে ভোট ডাকাতি মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকা এ সরকারকে হঠাতে হবে। এর জন্য গণসংগ্রাম, গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, সরকার করোনা মোকাবিলায় ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা আর্থিক প্রণোদনা দিয়েছে। এর সামান্য কিয়দংশ সরাসরি গরিব মানুষকে দেয়া হয়েছে। আড়াই হাজার টাকা করে পঞ্চাশ লাখ মানুষকে দেয়ার কথা থাকলেও তা সকলকে দেয়া হয় নাই। প্রণোদনার প্রায় পুরোটা শিল্পমালিকসহ ধনী উদ্যোক্তাদের প্রদান করা হয়েছে। কৃষক, শ্রমিকদের নামে যে বরাদ্দ তা গেছে মূলত চাতাল মালিক, ব্যবসায়ী, অকৃষক জমির মালিক ও গার্মেন্ট কারখানার মালিকদের হাতে।

কমরেড শাহ আলম বলেন, এ সরকার লুটেরা ধনিকদের সরকার। শেয়ার বাজার লুণ্ঠনকারীরা সংসদ আলোকিত করে বসে আছে। ব্যবসায়ীরা মন্ত্রিসভার মূল মূল পদগুলোতে আসীন হয়ে আছে।

তিনি বলেন, দেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় চালিত করতে হলে লুটেরা ধনিকদের ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করতে হবে।

সমাবেশের আগে একটি বিক্ষোভ মিছিল পল্টন, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ ও গুলিস্তানের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

একই দাবিতে বরিশাল, গাইবান্ধা, ফরিদপুর, মৌলভীবাজার, নওগাঁ, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ব্রাহ্মণবাড়ীয়াসহ দেশের প্রায় সকল জেলা শহর এবং অনেক উপজেলা শহরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়।


Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন

Login to comment..