মোদীর আসন্ন ঢাকা সফর সম্পর্কে সিপিবি

Posted: 05 জুন, 2015

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ এক বিবৃতিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরকে স্বাগত জানিয়েছেন। বিবৃতিতে সিপিবি নেতৃবৃন্দ বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের স্বার্থে দু’দেশের মধ্যে পারস্পরিক সমমর্যাদাভিত্তিক বন্ধুত্ব, সহযোগিতা, সৌহার্দ বাড়ানো প্রয়োজন। এই প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসী তৎপরতা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে অর্থনৈতিক সংকট থেকে রেহাই দেওয়ার বদলে, সাম্রাজ্যবাদ শোষণের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে তা তীব্রতর করেছে। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সকলকে আজ একসাথে রুখে দাঁড়াতে হবে। সাম্রাজ্যবাদের পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ এই দেশগুলোকে বিপদাপন্ন করে তুলেছে। ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব ক্ষুণ্ণ হোক সাম্রাজ্যবাদ ও প্রতিক্রিয়াশীল মহলবিশেষ সে বিষয়ে আগ্রহী। দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত বিষয়সমূহ সুরাহা না হওয়ার এবং কিছু বিষয় ঝুলে থাকার এই পরিস্থিতিকে তারা কাজে লাগাচ্ছে। নয়া উদারবাদী অর্থনৈতিক নীতি চাপিয়ে দিয়ে দুটি দেশকে সাম্রাজ্যবাদী অর্থনৈতিক বলয়ে আটকে রাখার চেষ্টা জোরদার করা হয়েছে। এই লক্ষ্যে ‘চীন ঘেরাও’ স্ট্র্যাটেজিতে বিভিন্ন চুক্তি ও পরিকল্পনায় আমাদের দেশ দুটিকে বেঁধে ফেলার চক্রান্ত চলছে। এসবের বিরুদ্ধে স্পষ্ট ঘোষণা ও সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আমরা প্রসারিত দেখতে চাই। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, আমরা একথাও বলতে চাই যে, দুই দেশের সম্পর্ক এই প্রত্যাশিত ধারায় অগ্রসর হওয়াটা কেবল দুই দেশের সরকারের ওপর নির্ভর করে না। এজন্য দুই দেশের জনগণের মধ্যে ‘পিপল টু পিপল’ সহযোগিতা বৃদ্ধি করা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে দু’দেশের বাম-প্রগতিশীল-শক্তিকেও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ‘ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির’ মাধ্যমে স্থল-সীমান্ত নির্ধারণ বিষয়ে যে ফয়সালা হয়েছিল, তা আইনে পরিণত করতে চার দশক বিলম্ব করা হলেও অবশেষে ভারত তা আইনে পরিণত করেছে। এটা শুভ পদক্ষেপ। কিন্তু মাঠে ময়দানে তার সুনির্দিষ্ট বাস্তবায়ন দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। দু’দেশের মধ্যে একটি বড় সমস্যা হলো অভিন্ন নদীর পানি বন্টনের ন্যায়সঙ্গত মীমাংসা। এ বিষয়ে বিলম্ব ও টালবাহানা বাংলাদেশের জনগণকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করছে। তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি সম্পর্কে মীমাংসিত ফর্মুলা নতুন করে আলাপ-আলোচনা করতে হবে বলেও অযৌক্তিকভাবে বলা হচ্ছে। তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের প্রতিশ্রুতি প্রকাশ্যে ঘোষণার পরেও ভারতের দিক থেকে তা কয়েক দফায় বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। এবারও এই চুক্তি স্বাক্ষর হবে না বলে জানানো হয়েছে। মানুষের প্রত্যাশাকে বারবার ভুলুণ্ঠিত করলে সেটা সন্দেহ-অবিশ্বাসের জন্ম দেয় এবং দু’দেশের বন্ধুত্বকে এগিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়াকে নষ্ট করে। এছাড়াও দু’দেশের মধ্যে রয়েছে বিপুল বাণিজ্য ঘাটতির সমস্যা। কাঁটাতাঁরের বেড়া, সীমান্তে গুলি করে মানুষ হত্যা ইত্যাদি সমস্যাগুলিও নিরসন হওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশের এই সকল ন্যায্য প্রত্যাশা পূরণ হোক, সেটি দেশবাসী দেখতে চায়। সাথে সাথে বাংলাদেশে স্বার্থ ক্ষুণ্ণ না করে ভারতের চাহিদাগুলোর বাস্তবায়ন করাও প্রয়োজন। বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি দূর করতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করাও জরুরি। সিপিবি নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, সহযোগিতার বিষয়টি একমুখী হয়ে উঠলে তা বন্ধুত্বের পরিবেশকে যথাযথভাবে এগিয়ে নেয় না। বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিভেদের যে পরিস্থিতি বিরাজমান তা যেন কোনভাবেই দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা নির্ধারণের সময় বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হওয়ার মতো উপাদান না হয়ে ওঠে, সেদিকে দৃষ্টি রাখাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই সফর উভয় দেশের মধ্যে বিরাজমান বিরোধগুলি দ্রুত নিস্পত্তির মাধ্যমে সমমর্যাদা সম্পন্ন দুই দেশের সার্বিক সহযোগিতার দ্বার প্রসারিত করে কিনা তা দেখার জন্য দেশবাসী আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করছে। এই সফরের ফলাফল পর্যবেক্ষণ করার পরই সে সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে। বার্তা প্রেরক চন্দন সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় দপ্তর বিভাগ