Revolutionary democratic transformation towards socialism

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলসমূহ বেসরকারিকরণ মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা পাটকল বন্ধের প্রতিবাদে পাট শ্রমিক, পাট চাষী ও দেশবাসীকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান সিপিবির

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলসমূহ বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে এ ধরনের গণবিরোধী ও হটকারী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। আজ ৩০ জুন পার্টির সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোহম্মদ শাহ আলম এক বিবৃতিতে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর দেশের প্রধান শিল্প পাটকলসমূহ রাষ্ট্রায়ত্তকরণ করা ছিল ১১ দফার অন্যতম অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন। গত ৪০ বছর ধরে ক্ষমতাসীন সরকারসমূহ এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজীসহ পঞ্চাশের অধিক পাটকল বন্ধ বা বেসরকারিকরণ করে জাতি ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। বিবৃতিতে সিপিবি নেতৃবৃন্দ বলেন, পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশের পাটচাষীদের উৎপাদিত পাট ব্যবহার করে পশ্চিম পাকিস্তানী আদমজী-বাওয়ানিদের এ দেশের মানুষকে শোষণের বিরোধিতা করেই পাটকলসমূহ জাতীয়করণের দাবি উত্থাপিত হয়েছিল। মুক্তিসংগ্রামের অঙ্গীকার হিসেবে ৭২ সালে ৭৭টি পাটকল রাষ্ট্রায়ত্ত করা হয়। ১৯৮২ সালে এরশাদ আমলে বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ এর প্রেসক্রিপশান স্ট্রাকচারাল অ্যাডজাস্টমেন্ট এর নামে পাটকলসমূহ বেসরকারিকরণের শুরু হয়। ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি-জামাত সরকারের শিল্পমন্ত্রী রাজাকার নিজামীর হাত দিয়ে দেশের বৃহত্তম আদমজী পাটটকল বন্ধ করে দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দাবিদার বর্তমান আওয়ামী সরকার অবশিষ্ট ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এ পুরো প্রক্রিয়াটাই জাতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা। নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার লোকসানের কথা বলে পাটকলসমূহ বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লোকসানের জন্য শ্রমিকরা দায়ী নয়। দায়ী সরকারের ভুল নীতি, দুর্নীতি ও কর্মকর্তাদের লুটপাট। পাট ক্রয়, পাট পণ্য বহুমুখীকরণের ব্যর্থতা ও আন্তর্জাতিক বাজারে পাট পণ্য বিক্রির ব্যর্থতার দায় শ্রমিকদের উপর চাপিয়ে দেয়া যাবে না। নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলসমূহ ৬০/৭০ বছর পুরনো যন্ত্রপাতির কারণে উৎপাদনশীলতা কমে গেছে। এর দায়ও শ্রমিকদের নয়। আধুনিকায়নের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মুনাফা করা সম্ভব। নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার ২৫ হাজার স্থায়ী পাট শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেক করার জন্য ৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে চায় কিন্তু মাত্র ১২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে কারখানাগুলোকে আধুনিকায়ন করতে আগ্রহী নয়। এ থেকে সরকারের দুরভিসন্ধি বোঝা যায়। এর আগেও পিপিপি’র মাধ্যমে বেসরকারীকরণের করা শিল্প কারখানাসমূহের পরিণতি সবাই জানে। অবশিষ্ট যে ২৫ টি কারখানা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করেছে তার পরিণতিও একই হবে। নেতৃবৃন্দ বলেন দেশের লাখ লাখ কৃষক পাট চাষের সাথে সম্পৃক্ত। এ সকল কৃষককে বেসরকারি পাটকল মালিকদের হাতে ছেড়ে দেয়া হবে। পাটের দাম নিয়ন্ত্রণ করার একছত্র ক্ষমতা পেয়ে যাবে বেসরকারি পাটকল মালিকরা। আর উৎপাদিত পাটের একটা বড় অংশ পাশের দেশে পাচার হয়ে যাবে তাদের পাটকলসমূহের কাঁচামাল হওয়ার জন্য। নেতৃবৃন্দ একশ শতাংশ দেশিয় পাট শিল্পকে ব্যক্তি মালিকানায় তুলে দেয়ার তীব্র নিন্দা জানান। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ রাষ্ট্রায়াত্ত পাটকলসমূহ বেসরকারিকরণ করে পাটচাষ ও পাটশিল্পকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা না করে মাত্র ১২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে আধুনিকায়ন করার মাধ্যমে দেশীয় পাট শিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকারের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে তারা কারাখানা বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্তে অনড়। তারা পাটকল শ্রমিক, পাট চাষী ও দেশবাসীকে সরকারের এই গণবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। নেতৃবৃন্দ আগামী ২ জুলাই পাটকল বন্ধের প্রতিবাদসহ অন্যান্য দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল ও সারাদেশে জেলায় জেলায় রাজপথে অবস্থান ও অবরোধ কর্মসূচি সফল করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন

Login to comment..