## বাম গণতান্ত্রিক জোটের সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নজিরবিহীন ভোট ডাকাতির নৈশকালীন নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে কর্মসূচি এবং দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের বক্তব্য তুলে ধরতে আজ ১৮ নভেম্বর পুরানা পল্টনস্থ মৈত্রী মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক সিপিবি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন। উপস্থিত ছিলেন সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম, বাসদ-এর সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাসদ (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, ইউসিএলবি’র সম্পাদকম-লীর সদস্য অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকম-লীর সদস্য মনিরউদ্দিন পাপ্পু।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর পূর্তি হবে। ভোট কারচুপি, জালিয়াতি, ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং, মিডিয়া ক্যু ইত্যাদি সকল বিষয়কে ছাপিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছিল ভোটের আগের রাতে ভোট বাক্স ভরে রাখার ‘নৈশকালীন নির্বাচনে’র এক নতুন কীর্তি। নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, প্রশাসন, ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের সংগঠন, কায়েমী স্বার্থবাদী সকল চক্র, দলীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মিলে ভোটাধিকার হরণের মতো একটা গর্হিত কাজে একযোগে লিপ্ত হয়েছিল, তা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার, সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতি, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চেতনা, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ভোটাধিকারের লড়াইয়ে আমাদের অঙ্গীকার, প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সংস্কৃতিকে চরমভাবে আঘাত করেছে। বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনের দিন ৩০ ডিসেম্বর আরো একটি কালো দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। জনগণের সম্মতি ছাড়াই ভোট ডাকাতির অবৈধ জাতীয় সংসদ ও সরকার জনগণের ঘাড়ের ওপর চেপে বসে আছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, গত ১১ বছর একটানা ক্ষমতায় আছে আওয়ামী ১৪ দলীয় জোট। এ সময়কালে ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট, শেয়ারবাজার লুট, খেলাপী ঋণ প্রভৃতির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। ক্যাসিনোর নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে আওয়ামী যুবলীগের নেতারা। প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। সরকারি কেনা-কাটায় গত এক বছরে উন্মোচিত হয়েছে বালিশ, পর্দা, টিন, মেডিক্যাল সরঞ্জাম প্রভৃতি দুর্নীতির একের পর এক ভয়াবহ চিত্র। পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়গুলো দুর্নীতির আখড়াতে পরিণত হয়েছে। উপাচার্য ও প্রশাসনের নানা ধরনের দুর্নীতি প্রকাশিত হচ্ছে। সরকারের শুদ্ধি অভিযান কয়েকজন চুনোপুঁটি ধরার মধ্য দিয়ে মুখ থুবরে পড়ে আছে। নারী ও শিশু নিপীড়ন-হত্যাকা- ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো ছাত্রলীগের টর্চার সেলে পরিণত হয়েছে। অসহনীয় বেকারত্বে সরকারের প্রতি ঘরে ন্যূনতম একটি কর্মসংস্থান দেয়ার অঙ্গীকার ফাঁকা বুলিতে রূপান্তরিত হয়েছে। আয় বৈষম্য-সম্পদ বৈষম্য উৎকট রূপ নিয়েছে। এ সরকার দেশি এবং বিদেশি সহযোগি যারা ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের ভোটারবিহীন ও নৈশকালীন নির্বাচনে সহযোগিতা করেছে সেই আমলা, লুটেরা ব্যবসায়ী, সামাজিক দুর্বৃত্ত এবং বৈদেশিক শক্তির কাছে নতজানু। তাদেরকে নানাভাবে পরিতুষ্ট করার নীতি এ সরকার গ্রহণ করেছে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনগণ রাষ্ট্রের মালিক। জনগণ তাদের ক্ষমতার চর্চা করে তাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে। জনগণের ভোটদানের অধিকার কেড়ে নিয়ে তাদের সম্মতি ছাড়াই বিজয়ী ঘোষিত অবৈধ প্রতিনিধিদের জাতীয় সংসদ গঠিত হয়েছে। জনগণের ভোটদানের অধিকার ছিনিয়ে নেয়ার এই দিনটিকে বাম গণতান্ত্রিক জোট ’কালো দিবস’ হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছে।
কর্মসূচি
১. আগামী ২১ নভেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে পেঁয়াজ, চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধি ও সরকারের ক্ষমাহীন নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
২. জনগণের ভোটাধিকার হরণের প্রতিবাদে আগামী ৩০ ডিসেম্বর সারা দেশে উপজেলা পর্যায়ে জোটের শরিক দলসমূহের কার্যালয়ে ‘কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ ও কালো পতাকা মিছিল’ অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকায় কেন্দ্রীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।