Revolutionary democratic transformation towards socialism

অক্টোবর বিপ্লব বার্ষিকীতে সিপিবি’র আলোচনা সভায় সেলিম পুঁজিবাদের পথ বেপরোয়া লুটপাট ও সমাজকে নৈরাজ্যের অন্ধকারে ডোবাচ্ছে


মহান অক্টোবর রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ১০২তম (১৯১৭-২০১৯) বার্ষিকীতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) আয়োজিত সভায় সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “অক্টোবর বিপ্লব বিশ্ব সভ্যতার জন্য যে আলোর নিশানা জ্বালিয়ে দিয়ে গেছে সেই আলোর পথ ধরেই সভ্যতার অগ্রগতি সম্ভব। সাময়িক পশ্চাদপসারণের পর সমাজতন্ত্রের আজ আবার দেশে দেশে অজেয় শক্তিতে জেগে উঠছে।” আজ ৭ নভেম্বর বিকাল ৫টায় মৈত্রী মিলনায়তনে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিবি সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম, অর্থনীতিবিদ, সিপিবি নেতা অধ্যাপক এম. এম. আকাশ, সিপিবি’র সহকারী সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাড. হাসান তারিক চৌধুরী সোহেল, ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. সাজেদুল হক রুবেল ও কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা লাকী আক্তার। সভা পরিচালনা করেন সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। সভায় মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম আরও বলেন, সমাজতন্ত্রের পথই হলো মাবনমুক্তির প্রকৃত পথ। এটি শুধু এ কারণে নয় যে, দেশে সংবিধানে ‘সমাজতন্ত্র’ অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। গত প্রায় অর্ধশতাব্দীর অভিজ্ঞতাও একথা প্রমাণ করেছে যে, পুঁজিবাদের ‘নয়া উদারবাদী পুঁজিবাদের’ পথ একদিকে বেপরোয়া লুটপাট অন্যদিকে শোষণ-বৈষম্য ও সমাজকে নৈরাজ্যের অন্ধকারে ডুবিয়ে দেয়। তাই, দেশ বাঁচানোর জন্য ‘সমাজতন্ত্রের’ পথ ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, আমাদের ভূ-খণ্ডে কমিউনিস্ট আন্দোলন তার এক শতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে। ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানের উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে কমিউনিস্টরা সাহসের সাথে লড়াই করেছে, বহু কমিউনিস্ট বুকের রক্ত দিয়েছে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য নিরবিচ্ছিন্নভাবে সংগ্রাম করেছে। জনগণের ভাত-কাপড়ের অধিকারের লড়াইয়ের অগ্রভাগে থেকে শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এত ঐতিহ্য সত্ত্বেও, কমিউনিস্টরা এক সময় বিভক্ত হয়েছে অনেক বিচ্ছিন্ন খণ্ডে বিভক্ত হয়েছে পরেছিল। যে পটভূমিতে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছিল তা এখন আর সেভাবে বিরাজ করে না। তাই কমিউনিস্টরা আজ যে যেখানেই আছেন, তাদের সবাইকে আজ ঐক্যবদ্ধ হওয়া স্বাভাবিক কর্তব্য হয়ে উঠেছে। তাছাড়া দেশ আজ যে অবক্ষয়ের অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে তা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে আজ লুটেরা ধনিক শ্রেণি রাজনৈতিক মেরুকরণের বাইরে একটি ‘প্রকৃত বাম-বিকল্প’ গড়ে তোলা জরুরি কর্তব্য হয়ে উঠেছে। এই বিকল্প গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি আবশ্যক শর্ত হয়ে উঠেছে, কমিউনিস্টদের শক্তি বৃদ্ধি ও ‘কমিউনিস্ট ঐক্য’। সিপিবি আজ সেই ‘কমিউনিস্ট ঐক্যের’ আহ্বান জানাচ্ছে। সভায় সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের মাধ্যমে বুর্জোয়ারা গির্জাকে রাষ্ট্র থেকে পৃথক করে, সমাজ চেতনায় বিজ্ঞান চর্চা প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক চর্চা চালু করে বর্তমানে তিনটি বিষয় তাদের শ্রেণি স্বার্থের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বুর্জোয়ারা আজকে ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব ও উগ্র জাতীয়তাকে ব্যবহার করছে তাদের টিকে থাকার স্বার্থে। আধুনিক পুঁজিবাদ মধ্যযুগীয় ধর্মীয় ভাবাদর্শকে বিশেষভাবে কাজে লাগাচ্ছে যা তার সংকটকে উন্মোচিত করে। এটা তার সবলতার দিক নয়, এটা তার দুর্বলতার দিক। তাই পুঁজিবাদ মানব সমাজকে মুক্তি দিতে পারে না। আলোচনা সভায় অধ্যাপক এম. এম. আকাশ বলেন, ‘লেনিন-এর সমাজতন্ত্র আবশ্যকীয়ভাবে ছিল জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা, জনগণের। আমলাতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র সেটা ছিল না।’ তাই ‘মুক্ত মানবের মুক্ত সমাজ’ গড়তে সমাজতন্ত্র এখনও সময়ের দাবি। মানব সভ্যতার ভবিষ্যৎ সেদিকেই যাচ্ছে। আলোচনা সভা শেষে ‘বায়োগ্রাফি অব লেনিন’ প্রামান্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন

Login to comment..