Revolutionary democratic transformation towards socialism

প্রধান নির্বাচন কমিশনের সাথে সাক্ষাৎকারে সিপিবি-বাসদ-বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটির নেতৃবৃন্দ জামানতসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যোগ্য কিন্তু আর্থিকভাবে অসচ্ছল রাজনৈতিক কর্মীদের নির্বাচনে প্রার্থী হতে বাধা সৃষ্টি করবেন না জাতীয় সংসদসহ সকল নির্বাচনে জামানত কমান

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক বাস্তবায়নযোগ্য ১৮দফা প্রস্তাবনা নিয়ে আজ আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে সাক্ষাতকালে সিপিবি, বাসদ ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত দাবি জানান। প্রতিনিধি দলে ছিলেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম, বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জাহেদুল হক মিলু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য আকবর খান। আলোচনাকালে নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মো. রফিকুল ইসলাম ও বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) শাহদাত হোসেন চৌধুরী। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত তিনটি দল সিপিবি, বাসদ ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিনিধি দলের পক্ষে সূচনা বক্তব্যে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আমাদের তিনটি দলের পক্ষ থেকে আলাদাভাবে ইতোমধ্যে দেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং সুস্থ গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিস্তারিত মতামত কমিশনের বিবেচনার জন্য প্রদান করা হয়েছে। আমরা মনে করি, অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান ও সুস্থ গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠার জন্য উল্লেখিত সুপারিশসমূহ বাস্তবায়ন করা জরুরি। আমাদের সুপারিশসমূহের কতকগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের প্রয়োজন হবে। কিন্তু আমাদের অনেকগুলো সুপারিশ রয়েছে যাদের বাস্তবায়ন নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত। প্রতিনিধি দলের পক্ষে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ ও সকলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে অর্থবহ করার জন্য ১৮ দফা প্রস্তাবনা উত্থাপন করেন। প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে ছিল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর জামানত ৫ (পাঁচ) হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে, ভোটার তালিকার সিডি ক্রয়ের বাধ্যবাধকতা বাতিল করে বিনামূল্যে প্রার্থীদের সরবরাহ করতে হবে, সকল প্রার্থীদের জন্য ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) সনদ বাধ্যতামূলক করার পরিবর্তে কেবল যে সকল প্রার্থীর আয় করাররোপযোগ্য তাদের জন্য বাধ্যতামূলক করতে হবে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনলাইনে মনোনয়ন জমা গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে, প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে প্রার্থীদের পরিচিতি সভা আয়োজন করতে হবে ইত্যাদি। বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান তাঁর বক্তব্যে চলমান রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বড়দলগুলোর প্রার্থীদের নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের বিষয়গুলো তুলে ধরেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও উপস্থিত কমিশনারগণ তাঁদের বক্তব্যে অনেকগুলো সুপারিশের নায্যতা স্বীকার করে বলেন, নির্বাচন কমিশন তা ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়নের দিকে অগ্রসর হবে প্রস্তাবনাসমূহ: সম্মানিত প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন কমিশনারবৃন্দ নির্বাচন কমিশনের সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ আমাদের পক্ষ থেকে আপনাদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত আমাদের তিনটি দলের পক্ষ থেকে আলাদাভাবে ইতোমধ্যে দেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং সুস্থ গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিস্তারিত মতামত কমিশনের বিবেচনার জন্য প্রদান করা হয়েছে। আমরা মনে করি, অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান ও সুস্থ গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠার জন্য উল্লেখিত সুপারিশসমূহ বাস্তবায়ন করা জরুরি। আমাদের সুপারিশসমূহের কতকগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের প্রয়োজন হবে। কিন্তু আমাদের অনেকগুলো সুপারিশ রয়েছে যাদের বাস্তবায়ন নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সমীপে আমরা তিনটি পার্টি- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ তুলে ধরছি যেগুলো নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব উদ্যোগে বাস্তবায়ন করা সম্ভব- ১. জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য জামানতের পরিমাণ সর্বোচ্চ ৫ (পাঁচ) হাজার টাকা করতে হবে। ২. ভোটার তালিকার সিডি কেনার বাধ্যবাধকতা বাতিল করে প্রার্থীদেরকে বিনামূল্যে ভোটার তালিকা সরবরাহ করতে হবে। ৩. জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল প্রার্থীর জন্য টিআইএন বাধ্যতামূলক করার পরিবর্তে কেবল যে সব প্রার্থীর আয় করারোপযোগ্য সীমার উর্ধ্বে তাদের ক্ষেত্রে টিআইএন বাধ্যতামূলক করতে হবে। ৪. জাতীয় নির্বাচনে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেবার বিধান চালু করতে হবে। এতে মনোনয়পত্র জমা প্রদানকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা, সহিংসতা রোধ করা যাবে। ৫. জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় নিরাপত্তা ব্যতীত বেসামরিক প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনীসহ যাবতীয় আইন-শৃংখলা রক্ষকারী বাহিনী, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, অর্থ, তথ্য ও স্থানীয় সরকার বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহ নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। ৬. জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী হতে হলে কোন ব্যক্তিকে কমপক্ষে ৫ (পাঁচ) বছর সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের সদস্য হিসেবে সক্রিয় থাকতে হবে। চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ, কালো টাকার মালিক, ঋণখেলাপি, সরকারি সম্পদ আত্মসাৎকারি, অর্থসহ জাতীয় সম্পদ পাচারকারি, ফৌজদারি অপরাধে দন্ডিত, চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী অপরাধী প্রভৃতি গণবিরোধী ব্যক্তিদের নির্বাচনে প্রার্থী হবার সুযোগ দেয়া যাবে না। ৭. দলের মনোনয়ন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তৃণমূল থেকে স্বচ্ছ মনোনয়ন প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করতে হবে। মনোনয়ন বাণিজ্য রোধকল্পে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নিবিড় পর্যবেক্ষণসহ কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। ৮. প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে প্রার্থীদের পরিচিতি সভা আয়োজন করতে হবে। ৯. জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একজন প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা কমিয়ে ৩ লাখ টাকা নির্ধারণ করতে হবে। ১০. প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় একজন কর্মকর্তাকে প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় সার্বক্ষণিকভাবে মনিটর করা এবং নির্বাচন কমিশনকে সে সম্পর্কে দৈনন্দিন ভিত্তিতে রিপোর্ট প্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। প্রার্থী ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদের পূর্ণ বিবরণী এবং প্রার্থীর নির্বাচনী আয়-ব্যয়ের হিসাব সর্বসাধারণের জ্ঞাতার্থে উন্মুক্ত দলিল হিসেবে রাখতে হবে এবং প্রচার মাধ্যমকে তা সরবরাহ করতে হবে। যেকোনো ভোটারকে এসব বিবরণী ও হিসাবের তথ্য চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ দিতে হবে। ১১. নির্বাচনী কাজের আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন অনুষ্ঠানের ৭ দিনের মধ্যে জমা দিতে হবে এবং তা করতে না পারলে নির্বাচিত সদস্যের শপথ গ্রহণ বন্ধ রাখতে হবে। ঐ বিবরণীর যথার্থতা যাচাইয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। আয়-ব্যয় ও সম্পদের মিথ্যা তথ্য প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। ১২. নির্বাচনে যে কোনো প্রকার বল প্রয়োগ, অস্ত্র বহন ও প্রদর্শন ইত্যাদি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং এ ধরনের ঘটনায় কঠোর শাস্তির বিধান করতে হবে। কোনো প্রার্থী অথবা রাজনৈতিক দলের পক্ষে পেশিশক্তির মহড়া, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভয়-ভীতি প্রদর্শন, নির্বাচনী কাজে সন্ত্রাসী-অপরাধী ব্যক্তিকে ব্যবহার ইত্যাদি কঠোরভাবে রোধ করতে হবে। এরুপ অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে তার বিবেচনামত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনী নিয়োগ করতে হবে। ১৩.নিবাচনে ধর্মের সর্বপ্রকার অপব্যবহার ও সাম্প্রদায়িক প্রচার-প্রচারণার ভিত্তিতে ভোট চাওয়া নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। ধর্মীয় উপাসনালয়, মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, মঠ, ওয়াজ মাহফিল, ধর্মসভায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচার, পোস্টার-হ্যান্ডবিল বিলি নিষিদ্ধ করতে হবে। ‘আঞ্চলিকতা’র ধুয়া তুলে প্রচারণা ও ভোট চাওয়া নিষিদ্ধ করতে হবে। ১৪. পোস্টার, লিফলেট, বৈদ্যুতিক বিজ্ঞাপন, মাইক, নির্বাচনী ব্যানার, দেয়াল লিখন, গেইট নির্মাণ ইত্যাদি বিষয়ে যেসব নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা আছে তার ব্যতিক্রমহীনভাবে পালন নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকেই ‘সুয়োমটো’ ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থানীয় নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে সকল প্রার্থী ও দলের মহাসমাবেশ, সমাবেশ, র‌্যালি, জনসভা ও অন্যান্য সকল নির্বাচনী কার্যক্রমের ক্ষেত্রে আচরণবিধি ও অন্যান্য বিধি-বিধান মেনে চলা হচ্ছে কিনা তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মনিটরিং ও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এসব প্রতিটি বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানের ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং লঙ্ঘনকারীদের প্রার্থীতা বাতিল করতে হবে। ১৫. নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের জন্য প্রকাশ্য শুনানীর ব্যবস্থা আরো স্বচ্ছ, উন্মুক্ত ও কার্যকর করতে হবে। সাধারণভাবে ভোটারের সম-সংখ্যার ভিত্তিতে নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। ১৬. প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারি প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারদের তালিকা এবং ভোট গ্রহণ কেন্দ্রের তালিকা নির্বাচনের কমপক্ষে দুই সপ্তাহ আগেই প্রার্থীদের সরবরাহ করতে হবে, যাতে এ বিষয়ে কারো কোনো আপত্তি থাকলে তা নির্বাচনের আগেই নিষ্পত্তি করা যায়। ১৭. জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশে ইভিএম ব্যবস্থা চালু করার পরিবেশ তৈরি হয়নি। সে জন্য আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবস্থা চালু না করাই সমচীন হবে। ১৮. রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের শর্তাবলী দশের সংবিধানের সাথে অসংগতিপূর্ণ। কোন কোন ক্ষেত্রে সাংঘর্ষিকও। আরপিও’র এসব অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক ধারাসমূহ বাতিল করতে হবে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ১ (এক) শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর সংগ্রহের বিধান অগণতান্ত্রিক বিধায় বাতিল করতে হবে। আমাদের সময় দেয়ার ও বক্তব্য শোনার জন্য আবার আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন

Login to comment..