Revolutionary democratic transformation towards socialism

নারী নির্যাতনবিরোধী সমাবেশে বামপন্থি নেতৃবৃন্দ নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলুন

নারীর প্রতি সহিংসতা দিন দিন বেড়েই চলছে। তারা ঘরের ভিতর স্বজনদের দ্বারা নিগৃহিত হচ্ছে। ঘরের বাইরেও নিগৃহ। যৌন নিপীড়ন ধর্ষণ খুনের শিকার হচ্ছে নারীরা। ২০১৬ সালে তিন’শ কন্যা শিশুসহ এক হাজারের বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। সত্তর জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। ধর্ষকরা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলকে আশ্রয় করে তাদের অপকর্ম চালায়। বিত্ত ও রাজনৈতিক প্রভাব ঘটিয়ে বিচারকে বৃদ্ধাঙ্গলি প্রদর্শন করে। গত ৪৬ বছর ধরে চলমান রাজনৈতিক, সামাজিক, নৈতিক অবক্ষয়, অধঃপতনের কারণে সমাজে নারীর প্রতি বর্বরতা ও নিপীড়ন বাড়ছে। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার বিকল্প নেই। নারী-শিশু নির্যাতন, খুন-ধর্ষণ, সামাজিক বর্বরতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি রুখে দাঁড়ানোর দাবিতে সিপিবি-বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার দেশব্যাপী আহূত বিক্ষোভ সমাবেশের কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে বামপন্থি নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত বক্তব্য রাখেন। আজ বিকাল সাড়ে চারটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ-এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা কমরেড বহ্নিশিখা জামালী, সিপিবি’র সম্পাদক কমরেড জলি তালুকদার, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা কমরেড আমেনা বেগম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (মাকর্সবাদী)’র কেন্দ্রীয় নেতা সাইফুজ্জামান সাকন, বাসদ নেতা শম্পা বসু, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা অপরাজিতা দে, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক। সভা পরিচালনা করেন ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় নেতা কমরেড নজরুল ইসলাম। সমাবেশের সভাপতির বক্তব্যে কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনী নারী নিপীড়নের যে সকল ঘটনা ঘটিয়েছে স্বাধীনতার পর গত ৪৬ বছরে নারী নিপীড়ন তাকেও ছাড়িয়ে গেছে। তিনি বলেন, ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তিনি আরো বলেন, সমাজতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণ ছাড়া নারীর আজকের অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো যাবে না। সমাবেশে সিপিবি’র সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, বাজার অর্থনীতির অনুষঙ্গ হিসেবে বাজার রাজনীতি চালু হয়েছে। দেশে বাজার অর্থনীতি-রাজনীতির ফলশ্রুতিতে নারী নিপীড়ন ও নির্যাতন বেড়ে চলেছে। শাসকশ্রেণী নারীর উপর নির্যাতন বন্ধে কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। আমরা বামপন্থীরা নারী নির্যাতন বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহন করবো। তিনি নারী নির্যাতন বন্ধে পাড়ায় পাড়ায় ‘আত্মরক্ষা কমিটি’ গঠন করার জন্য জনগণ ও নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। সমাবেশে কমরেড সাইফুল হক বলেন, ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে তনুকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছে। তার হত্যাকারীকে শনাক্ত করা যায়নি। বিচার অনেক দূরের বিষয়। বিচারহীনতার সংস্কৃতি এ ধরনের অপকর্মে ধর্ষণকারীদের উৎসাহিত করে। ধর্ষণকারীরা চিহ্নিত হলেই দেখা যায় তারা ক্ষমতাসীন দলের লোক। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তারা নিজেদের বিচারের বাইরে রাখতে সক্ষম হয়। সমাবেশে অন্যান্য বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ আজ অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। সরকারি ছত্রছায়ায় বুক ফুলিয়ে চলে ধর্ষকরা। জেলের ভিতরে বিশেষ সুযোগ সুবিধা পায়। বিচারহীনতা নির্যাতককে আস্কারা দেয় আর নিপীড়িতকে অসহায়ে পরিণত করে। নারীর জন্য নিরাপদ সমাজ গড়ার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তারা আরো বলেন, সংবিধান নারীকে সমমর্যাদা দিলেও নারীর মর্যাদা ভূলণ্ঠিত। রাষ্ট্র, সমাজ, কর্মস্থল সর্বত্রই নারী তার সমানাধিকার থেকে বঞ্চিত। পুরুষতান্ত্রিকতা থেকে বের হয়ে সমজে নারীর মর্যাদা ও সমানাধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে বামপন্থিদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। পরবর্তি কর্মসূচী ২১ আগস্ট ২০১৭ : সিপিবি-বাসদ-বামমোর্চার কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল সিরাজগঞ্জের বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করবেন। ২৪ আগস্ট ২০১৭ : সিপিবি-বাসদ-বামমোর্চার আহ্বানে ঈদের আগে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিরোধ, নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করা এবং ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন

Login to comment..