বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স আজ ২২ জানুয়ারি খুলনা রূপসার দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির সামনে থেকে শিববাড়ি মোড় পর্যন্ত পার্টি আয়োজিত পদযাত্রা ও গণসংযোগে অংশ নেন।
এ সময় তিনি খুলনার শিল্পাঞ্চল ধ্বংসের সমালোচনা করে বলেন, অতীতের সরকারগুলো খুলনাকে শিল্পহীন নগরীতে পরিণত করেছে। দক্ষিণাঞ্চলের পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করার মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের যে সম্ভাবনা ছিল তা কাজে লাগানো হয়নি। বিভিন্ন সময় নানা প্রকল্পের নামে লুটপাট অব্যাহত রাখা হয়েছে। রাস্তাঘাট উন্নয়নের নামে দীর্ঘদিন ধরে ভাঙ্গাচোরা রাস্তার মধ্যেই নগরবাসী বসবাস করছে। এ অঞ্চলের গরিব-মেহনতি মানুষের কোনো উন্নয়ন ঘটেনি। বস্তি আর রাস্তায় হকারের সংখ্যা কমছে না। রিকশা-অটোরিকশা চালিয়েই জীবন রক্ষার চেষ্টা করছে অনেকে, অথচ যাত্রী পাচ্ছেন না।
এ অবস্থা থেকে সব মানুষের বসবাসযোগ্য খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চল গড়ে তুলতে পুরো উন্নয়ন পরিকল্পনাকে ঢেলে সাজাতে হবে। এর জন্য ব্যবস্থা বদলের সংগ্রামকে অগ্রসর করতে হবে। একমাত্র নিতীনিষ্ঠ রাজনৈতিক শক্তি এই কাজটি করতে পারবে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিগত দিনে পরিবারতন্ত্র, গোষ্ঠীতন্ত্র আর কর্তৃত্ববাদী গোষ্ঠীর কাছে পুরো দেশবাসীর মত এ অঞ্চলের মানুষও জিম্মি ছিল। গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এ অবস্থার আপাতত অবসান হলেও এর স্থায়ী সমাধান করতে খুলনাবাসীকে সচেতন ও সংগঠিত হতে হবে।
রুহিন হোসেন প্রিন্স বর্তমান সরকারের নিত্যপণ্যের ওপর ভ্যাট-কর বাড়ানোর তীব্র সমালোচনা করে বলেন, জনগণ এ সরকারের কাছে স্বস্তি চাইছিল। কিন্তু এই সরকার পুরনো ব্যবস্থা বহাল রেখে মানুষের জীবনে অশান্তি ডেকে আনছে। সিন্ডিকেট বহাল আছে, পাচারের টাকা ফেরত আনার খবর নেই। খেলাপী ঋণের পুনঃতফসিল করা হচ্ছে। কোনো কোনো মহল ‘মব’ এর নামে নানা ধরনের অশান্তি সৃষ্টি করছে। যা গণ-অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
তিনি বলেন, অগণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে নানা ধরনের অপশক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে। তারা দেশকে আরও অশান্ত করতে চাইবে। তিনি গণতন্ত্রের ধারা এগিয়ে নেওয়ার জন্য অবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার দাবি জানান।
তিনি বলেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া চলবে। সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার করা দরকার ততটুকু করা অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান দায়িত্ব। আর অন্যান্য বিষয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে কি কি সংস্কার করা যায় তা সরকার সুনির্দিষ্ট করতে পারে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের সময় পর্যন্ত কিছু কাজ শুরু করা যেতে পারে। যাতে ওইসব কাজ চলমান থাকে। জনগণের ওপর বিচারের ভার ছেড়ে দিতে হবে। কোনো গোষ্ঠী যদি জনগণের পক্ষে দায়িত্ব পালন না করে, সাধারণ মানুষই তার জবাব দেবে।
তিনি বলেন, দেশকে বাঁচিয়ে রেখেছে কৃষক-শ্রমিকসহ
মেহনতি মানুষ। অথচ এই কৃষক ফসলের লাভজনক দাম পাচ্ছে না। সব শ্রমিকের কাজ নেই, আবার যাদের কাজ আছে তাদের জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করা যায়নি।
তিনি অবিলম্বে সকলের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি এবং সারাদেশে রেশন ব্যবস্থা ও ন্যায্য মূল্যের দোকান চালুর দাবি জানান। তিনি জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে দেশের সব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, জানমালের নিরাপত্তা, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণাসহ সাধারণ মানুষের ন্যায্য দাবি প্রতিষ্ঠায় সারাদেশে সপ্তাহব্যাপী ‘গণতন্ত্র অভিযাত্রা’র দ্বিতীয় দিনে আজ ২২ জানুয়ারি ২০২৫, বুধবার, বিকাল ৪টায় খুলনার রূপসার দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির সামনে থেকে শিববাড়ি অভিমুখে পদযাত্রা শুরুর পূর্ব সমাবেশে রুহিন হোসেন প্রিন্স তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
পদযাত্রায় অন্যান্যের মধ্যে পার্টির খুলনা জেলা কমিটির সভাপতি ডা.মনোজ দাস, সাধারণ সম্পাদক এস এ রশিদ, সহকারী সাধারণ সম্পাদক শেখ আব্দুল হান্নান, খুলনা মহানগর সভাপতি এইচ এম শাহাদাত, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নিত্যানন্দ ঢালী, মিজানুর রহমান বাবু, অশোক সরকার, এ্যাড চিত্তরঞ্জন গোলদার, ডা. এস এম ফরিদুজ্জামান, সুখন রায়, গাজী আফজাল হোসেন, আব্দুল হালিম, তোফাজ্জল হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা নিতাই পাল, মুক্তিযোদ্ধা কিংসুক রায়,ফজলুল হক, মুক্তিযোদ্ধা তরুণ সরকার,অধ্যাপক সঞ্জয় সাহা, হুমায়ুন কবির, এ্যাড. বাবুল হাওলাদার, পলাশ দাস, ফরহাদ হোসেন মিটন, সাইদুর রহমান বাবু, রিয়াসাত আলী রিয়াজ সহ অসংখ্য নেতা কর্মীরা অংশ নেন।
পদযাত্রা ও গণসংযোগে নেতৃবৃন্দ পার্টির প্রচারপত্র বিতরণ করেন এবং সাধারণ মানুষের সাথে মতবিনিময় করেন।
এ সময় নেতৃবৃন্দ সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আপনারা গত ৫৩ বছরে বিভিন্ন দলের শাসন দেখেছেন। এরা যেসব নীতিতে দেশ পরিচালনা করেছে তাতে সাধারণ মানুষের মুক্তি আসেনি। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে গেলে অবস্থার বদল করতে হবে। সামাজিক বিপ্লব সম্পন্ন করতে হবে। এজন্য নীতিহীন রাজনীতিকে ‘না’ বলে, নীতিনিষ্ঠ রাজনীতির পতাকা তলে সমবেত হতে হবে।’
নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘সেই ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত এই খুলনা অঞ্চলে বামপন্থী রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা জনস্বার্থে কাজ করে যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তা আজও চলমান আছে। এ অঞ্চলের মানুষকে এই রাজনীতির পতাকা তলে সমবেত হয়েই সম্ভাবনাময় এই অঞ্চলকে বৈষম্যমুক্ত অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার কাজকে অগ্রসর করতে হবে।’
পদযাত্রা ও গণসংযোগের সময় রাস্তার দুপাশের মানুষ আগ্রহভরে সিপিবি নেতৃবৃন্দের কথা শোনেন এবং মতবিনিময় করেন।
আগামী ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত খুলনা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় পদযাত্রা ও গণসংযোগ চলবে। সিপিবি কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এসব কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।