বাংলাদেশের
কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) ঢাকা বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির সভায় সিপিবি
সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের বিজয়কে
সংহত করে, নানা অপশক্তি সম্পর্কে সজাগ থাকতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান
জানিয়েছেন।
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ছাত্র-জনতার গণবিক্ষোভ
গণঅভ্যুত্থানে রূপান্তরিত হয়েছিল। ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের পরও অতীতে কোনো
বিক্ষোভে এত ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণ দেখা যায়নি।
তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানে
পতিত স্বৈরাচার ও স্বৈরাচারী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে, গণঅভ্যুত্থানের সফলতা
রক্ষা করে পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার অর্জন না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত
রাখতে হবে। নানা অপশক্তি এই সফলতা তাদের স্বার্থে কাজে লাগাতে চাইবে, এ
বিষয়ে সতর্ক থেকে এগুতে হবে। বিশেষত সাম্প্রদায়িক অপশক্তি, ’৭১-এর
যুদ্ধাপরাধীরা নানাভাবে সামনে আসছে। এসব বিষয়ে বিশেষভাবে সচেতন থেকে
সংগ্রাম ও সামগ্রিক কর্মকাণ্ড অগ্রসর করার আহ্বান জানান তিনি।
রুহিন
হোসেন প্রিন্স আরও বলেন, ধ্বংসপ্রাপ্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলোকে কার্যকর ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। সবার
গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এক ফ্যাসিবাদী শাসকের বদলে অন্য
ফ্যাসিবাদী শাসক বা ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
সভায়
অন্যান্য নেতৃবৃন্দ নির্বাচনের নামে প্রহসনের খেলা বন্ধ, সংখ্যানুপাতিক
নির্বাচন পদ্ধতি চালু, নির্বাচনে টাকা-পেশী-প্রশাসনিক কারসাজি ও
সাম্প্রদায়িক প্রচারণার ব্যবহার রোধসহ সর্বোচ্চ সংস্কার সাধনের জন্য
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের আলোচনা শুরুর আহ্বান জানান।
আজ ১৬ আগস্ট
২০২৪, শুক্রবার সকাল ১১টায় ঢাকা বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির সভা পার্টির
কেন্দ্রীয় কার্যালয়, মুক্তিভবনে সিপিবি ঢাকা জেলা কমিটির সভাপতি সুকান্ত
শফি চৌধুরী কমলের সভাপতিত্বে ও বিভাগীয় সমন্বয়ক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য
রফিকুজ্জামান লায়েকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন,
সিপিবির
সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক এ এন
রাশেদা, সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম,
ঢাকা উত্তরের সভাপতি ডা. সাজেদুল হক রুবেল, ঢাকা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক
জলি তালুকদার, নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক শিবনাথ চক্রবর্তী,
মানিকগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, মুন্সীগঞ্জ জেলার নেতা স ম
কামাল হোসেন, ফরিদপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক অরুণ কুমার শীল, ঢাকা জেলার
সাধারণ সম্পাদক আবিদ হোসেন, টাঙ্গাইল জেলার সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুজ্জামান
মতি, শরীয়তপুর জেলার সভাপতি নুরুল হক ঢালী, সাধারণ সম্পাদক সুশান্ত ভাওয়াল,
মাদারীপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান সানু, কিশোরগঞ্জ জেলার
সহ-সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত সরকার, নরসিংদী জেলার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল
হোসেন শান্তি, গাজীপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক কাজী রুহুল আমিন প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ
বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে মনে রাখতে হবে তারা গণঅভ্যুত্থানের ফসল।
তাদের কাছ থেকে আমরা এমন কোনো কর্মকাণ্ড আশা করি না, যা গণঅভ্যুত্থানের
চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। নেতৃবৃন্দ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে
বিনষ্ট করা যাবে না। অতীতে স্বৈরাচারী শাসকরা নিজেদের স্বার্থে এগুলো
ব্যবহার করেছিল। এ অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার
ধ্বংস করা যাবে না। গতকাল ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে
যেভাবে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য
নয়।
সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, আধিপত্যবাদী শক্তি ভারত এবং ভারতের অনেক মিডিয়া
যেভাবে বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রচার-প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে
দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে। একইসঙ্গে সাম্রাজ্যবাদ ও অন্যান্য শক্তি যারা
ভূ-রাজনৈতিক কারণে দেশের ওপরে আধিপত্য বিস্তার করতে চায় তাদের নানামুখী
কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও সচেতন থাকতে হবে। সভায় গণঅভ্যুত্থানের বিজয়কে সংহত
করে, দেশ ও মানুষের প্রকৃত মুক্তি অর্জনে ব্যবস্থা বদলের সংগ্রাম অগ্রসর
করতে কতক সাংগঠনিক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।