Revolutionary democratic transformation towards socialism

জান-মালের নিরাপত্তা, দখলদারিত্ব বন্ধ ও নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের আলোচনা শুরুর আহ্বান


আজ ১১ আগস্ট ২০২৪, রবিবার, বেলা ১২টায় রাজধানীর পুরানা পল্টনস্থ মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সংবাদ সম্মেলনে জান-মালের নিরাপত্তা, দখলদারিত্ব বন্ধ ও নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের আলোচনা শুরুর আহ্বান জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, জোটের সমন্বয়ক বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাসদ (মার্কসবাদী)’র সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী, সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন প্রমুখ।
 
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের পর ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল সরকার গঠনে সকল রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে মতামত নেয়া হবে। অন্য কোন দলের সাথে আলোচনা হয়েছিল কিনা তা আমাদের জানা নাই। তবে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পূর্বে আমাদের জোট বাম গণতান্ত্রিক জোটের মতামত না নিলেও আমরা এই সরকারকে গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে দেশ পরিচালনায় এগুনোর আহ্বান জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। তাই নির্বাচনে ‘না’ ভোটের বিধান, নির্বাচিত প্রতিনিধি জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন না করলে প্রত্যাহার, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতিসহ নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে অবিলম্বে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে আলোচনা শুরু করা এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়া শুরুর আহ্বান জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলাসহ দেশে যে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞসহ অরাজক ও নৈরাজ্যকর সহিংসতা বন্ধ, হামলাকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে স্বাধীন নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জুলাই-আগস্ট এর গণঅভ্যুত্থানে সংগঠিত সকল হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার, সম্পদ বাজেয়াপ্ত এবং নিহতদের পরিবারকে যথাযথ পুনর্বাসন, এবং সকল নিহত ও আহতদের প্রকৃত তালিকা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রকাশের দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশি হস্তক্ষেপ, বল প্রয়োগ, গুলিবর্ষণ আইন করে বন্ধ করা, চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব বন্ধ, মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে জড়িত স্থাপনা যারা ভাঙচুর করেছে তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা, স্থাপনাসমূহ পুনর্নিমাণের ঘোষণা, সরকারি বিভিন্ন পদে ইতোমধ্যে যে সব দলীয় লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের অব্যাহতি দিয়ে সৎ, দক্ষ, পেশাদারিত্বসম্পন্ন যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া, নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়াসহ লুটপাট-দুর্নীতি বন্ধ, বিদেশে পাচারকৃত টাকা ফেরত আনা, খেলাপি ঋণ উদ্ধার; দুর্নীতিবাজ, ঋণখেলাপি, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী ও অর্থপাচারকারীদের গ্রেপ্তার, বিচার ও তাদের স্থাবর অস্থাবর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আহ্বান জানানো হয়।

এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আবাসিক হল খুলে ক্লাস শুরু করা, সন্ত্রাসমুক্ত গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস, ছাত্র রাজনীতি বন্ধের পাঁয়তারা বন্ধ, গ্রাম শহরের শ্রমজীবীদের জন্য স্বল্প মূল্যে রেশনিং চালু, শিল্প কল কারখানা, ব্যাংক বীমা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য পূর্ণ চালু ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে অর্থনীতি সচল করার আহ্বান জানান হয়।

সংবাদ সম্মেলনে দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে দলীয়করণ মুক্ত ও এসব প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি করে একক কর্তৃত্বশালী এক ব্যক্তির শাসন ফিরে আসা রোধ, বাক-ব্যক্তি-সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, বিশেষ ক্ষমতা আইন, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ সকল অগণতান্ত্রিক কালাকানুন, সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনী, রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম ও ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল, সাম্রাজ্যবাদের সাথে গাঁটছড়া বাধা নতজানু পররাষ্ট্রনীতি পরিহার করা, বিদেশের সাথে সম্পাদিত জাতীয় স্বার্থবিরোধী সকল অসম চুক্তি বাতিল ও সকল চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শোষণ, বৈষম্যহীন অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে সংবিধানে বর্ণিত ধর্ম, বর্ণ, জাতি, সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত, পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, ভূমির অধিকারসহ জান-মালের নিরাপত্তা বিধান করা, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা শাসনের অবসান ঘটানো এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা; নিম্ন আদালতসহ বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ পৃথক করা; বিচারকদের যোগ্যতার মানদ-সহ আইন প্রণয়ন করে উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগের আহ্বান জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রেখে তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন বলে আশা ব্যক্ত করা হয়।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন

Login to comment..